• apnbkm.09@gmail.com
  • +91 9233172388
  • Vidyasagar Pally, Rampurhat
  • Mon-Sat 11:00 A.M - 8:00 P.M

Tuesday, May 29th, 2018

Astro Palmist Numerology Center

জোতিষ শাস্ত্রের গুরুত্বে ভাগ্য ও কর্ম

জোতিষ শাস্ত্রের গুরুত্বে ভাগ্য ও কর্ম

জ্যোতিষ চর্চা

ভাগ্য ও কর্ম ফল

আমাদের সৌরমণ্ডলে পৃথিবীর আরও গ্রহ আছে যাকে আমরা গ্রহ বলি , আমরা জানি হিন্দু বিবাহে নবগ্রহের পুজা করি এই পুজার কারন যাতে নব বর বধূর কল্যাণ হয় আর তার জীবন নির্বিঘ্নে কাটতে পারে এই পৃথিবী তে আমরা বসবাস করছি এতে আমাদের জীবনে শুধু পৃথিবীর প্রভাব নয় অন্য গ্রহের প্রভাব পরে তাই আমরা নবগ্রহের পুজা করি

সূর্য স্থির গ্রহ অন্য গ্রহ তার চারিদিকে গ্রহ উপগ্রহ পরিভ্রমণ করে তাদের নিয়ে আমাদের সৌর জগত । মানবীয় জীবনে সময় মত হয় । আমাদের জীবনে সুখ দুঃখ , লাভ হানি , জয় পরাজয় , জন্ম মৃত্যু , মিত্রতা শত্রুতা , অথবা আমাদের জীবনে যায় ঘটুক না কেন , এই সব নব গ্রহের প্রভাবে । বিশ্বের প্রত্যেক বস্তু , জীব জন্তু পশু পক্ষী , গাছ পালা তে এই গ্রহ এর প্রভাবে প্রভাবিত । গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাবে বিশ্বে সমস্ত কাজ সম্পাদিত হয় । জ্যোতিষাচার্জ বরাহমিহির সূর্য , চন্দ্র , মঙ্গল , বুধ , বৃহস্পতি , শুক্র , শনি সাত গ্রহ আর রাহু কেতু [ ছায়া গ্রহ ] নিয়ে নয় গ্রহ আমাদের জীবন কে নিয়ন্ত্রন করে । এই গ্রহের শুভতা মানুষের জীবনে বয়ে নিয়ে আসে আবার অশুভতা নিয়ে আনে দুঃখ কষ্ট এতে কোন সন্দেহ নেই । মানুষ তিন গুনের মধ্যে আবদ্ধ সত্ত্ব , রজ , তমো । বরহ মিহির পরিষ্কার করে বলেছেন মানুষ জীবনের চারদিকে দ্রুত গতিতে গতিশীল আর সেইক্ষণে মানুষ যে স্থলে জন্ম নেয় সেই সময় সেই স্থলে যে গ্রহের দৃষ্টি তার প্রভাব জাতকের স্বভাব সেই মত হয় তার উপর সেই গ্রহের প্রভাব পরে । কোন জাতক তমোগুণ কোন জাতক সত্ত্ব গুণী কোন জাতক রজোগুণী এই গ্রহে ঐ স্থানের জাতকের মধ্যে তার প্রভাব পড়ে । ধরুন একজন ডাকাত কেন ডাকাত ? একজন পণ্ডিত জ্ঞানী ব্যক্তি কেন জ্ঞানী ? তার জন্ম তারিখ জন্মের সময় জন্মের স্থানে তাৎক্ষনিক গ্রহ নক্ষত্রের অবস্থান নির্ধারিত করে দেয় সেই জাতক কেমন হবে । গ্রহের দৃষ্টি প্রভাব সেই জাতক কেমন হবে তা নির্ধারিত করে দেয় তাকে লগ্ন কুষ্ঠী বলে ।

ধরুন ২৬/০৫/২০১৮ মহাকাশের গোচর নিম্ন রুপ । এর লগ্ন অনুসারে জাতকের ভাগ্য নির্ধারিত একে কেউ পরিবর্তন করতে পারবে না । সারা জীবনের ভাগ্য সেই দিন নির্ধারিত । হয়ত অশুভ প্রভাবকে নিয়ন্ত্রিত করতে কিছু পুজা অর্চনা , রত্ন , বা উপায় আজকের জ্যোতিষীরা দেন কিন্তু বা শুভ ফল বৃদ্ধি করতে কিছু উপায় দেন তা জাতকে সহজে সাফল্যের নিয়ে যেতে পারে । এখান থেকে আমরা জানতে পারি জাতকের ভবিষৎ জীবন । সারা জীবন সেই জাতক কোন শুভ গ্রহের শুভফল পাবে আর কোন গ্রহের কুফল পাবে । এটা বুঝতে গেলে জানতে হবে কোন গ্রহ কি ফল দেয় ?

রবি ঃ যশ ও প্রতিষ্ঠা

চন্দ্র ঃ সৌম্য , শীতলতা ও মন

মঙ্গল ঃ শৌর্য এবং পরাক্রম

বুধ ঃ বুদ্ধি ,বিবেক এবং বানিজ্য

বৃহস্পতি ঃ ধর্ম , ন্যায় ,পরলৌকিক সুখ ও নীতি

শুক্র ঃ বিষয় বাসনা , কলা , সৌন্দর্য , সাংসারিক সুখ

শনি ঃ দুঃখ , ব্যাধি , কর্মফল

রাহু ঃ পাপ কর্ম ,দুর্ভাগ্য ,রাজনীতি , সাহস

কেতু ঃ দুঃখ ,রোগ , দুর্ঘটনা এবং শোক

এগুলি কখন ঘটবে তা জানতে দশ অন্তর দশা ও গোচর দেখতে হবে ।

জ্যোতিষ সমন্ধে আর আলোচনা আগে এই বিষয় টি মাথায় রাখতে হবে ।

স্বামী নিগমানন্দের মতে, কর্ম তিন প্রকারের যথা: ক্রীয়মান, সঞ্চিত, এবং প্রারব্ধ। যখন কেউ তার শ্রমের ফল তার জীবদ্দশাতেই উপভোগ করতে পারে, তখন তাকে বলা হয় ক্রীয়মান; তার শ্রমের ফল ভোগ করার পূর্বেই যদি সে মারা যায়, তবে তাকে বলা হয় সঞ্চিত কর্ম। পূর্ব জন্মের সঞ্চিত কর্মের উদ্বৃত্ত অংশ ভোগ করার জন্য যদি তার পুনর্জন্ম হয়, তবে তাকে বলা হয় প্রারব্ধ। সাধনার গুণে কারো পক্ষে ক্রীয়মান ও সঞ্চিতের প্রভাব নিজের জীবন থেকে মুছে ফেলা যেতে পারে কিন্ত্তু প্রারব্ধ কর্মের প্রভাব মুছে ফেলা সম্ভব নয়। পার্থিব উচ্চাকাঙ্ক্ষা দ্বারা যতক্ষণ কোন ব্যক্তি আবিষ্ট থাকে ততক্ষণ তাকে নিশ্চিতভাবে জন্ম-মৃত্যুর অন্তহীন ভ্রমণ গ্রহণ করতে হবে। জীবাত্মা কখনও কখনও নাক্ষত্রিক জগতে ভ্রমণ করার জন্য স্থূল দেহ ত্যাগ করে যাকে বলা হয় প্রেত লোক। এর কর্মের প্রভাবের মধ্য দিয়ে যাবার পর এটি স্থূল দেহের সাথে স্থূল জগতে ফিরে আসে তার অতিরিক্ত বাসনাসমূহ যা তার পূর্ব জন্মে ছিল তা পূরণ করার জন্য। এ ব্যাপারে অজ্ঞ হয়ে কিভাবে এটি এক জগত থেকে অন্য জগতে চলাফেরা করে তা এক বড় রহস্যের বিষয়। যোগীরা এ রহস্য স্পষ্টভাবে হৃদয়ঙ্গম বা প্রত্যক্ষ করতে পারেন এবং জীবের পূর্ব সংস্কার সম্পর্কে বলতে পারেন।

বেদান্তদর্শন-ব্রহ্মবেদান্ত-১৭ : বাদরায়ণের দার্শনিক মত- কর্মফল ও পুনর্জন্ম |


২.২.০৫ : কর্মফল ও পুনর্জন্ম

.
বেদান্তসূত্রে সৃষ্টিকর্তা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, জগৎকে সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মকেও জীবের কর্মের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়। কেননা, এই সৃষ্টিজগৎ আপ্তকাম ব্রহ্মের লীলা (ব্রহ্মসূত্র-২/১/৩৩) হলেও, জগৎ-স্রষ্টা হিসেবে ব্রহ্মর পক্ষপাতিত্ব ও নিষ্ঠুরতার আপত্তি উত্থাপিত হয়। বস্তুত জগতে- মানব সমাজে- যে বৈষম্য দেখা যায়, অনেকেই শ্রম করতে করতে অনাহারে মৃতপ্রায় হলেও কেউ কেউ বিনা পরিশ্রমেই অন্যের শ্রমের ফল ভোগ করে বিলাসী জীবন কাটায়। তাদের দেখেই পুরোহিতবর্গ দেবলোকের কল্পনা করেছেন। আবার মনুষ্য থেকে ক্ষুদ্রতম কীট পর্যন্ত প্রাণিজগতে যে ভীষণ সংহার দেখা যায় যায় তা জগৎ-স্রষ্টা ব্রহ্মকে বড়ই হৃদয়হীন বলে প্রমাণ করে, এবং তার থেকে আত্মরক্ষার জন্যই উপনিষদে পূর্বজন্মকৃত কর্মসিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়েছে-

‘তাদের মধ্যে যারা (পূর্বজন্মে) রমণীয় আচরণ বা পুণ্যকর্ম করে তারা দেহান্তরে শীঘ্রই ব্রাহ্মণযোনিতে বা ক্ষত্রিয়যোনিতে বা বৈশ্যযোনিতে জন্মলাভ করে। আবার যারা (পূর্বজন্মে) কপূয়াচরণ অর্থাৎ কুৎসিত বা অশুভ কর্ম করে তাদের শীঘ্রই কুকুরযোনিতে বা শূকরযোনিতে বা চণ্ডালযোনিতে পুনর্জন্ম হয়।’- (ছান্দোগ্য-৫/১০/৭)।

একই বিষয়ে বৃহদারণ্যক উপনিষদেও বলা হয়েছে এভাবে-

‘…তিনি কর্মকেই আশ্রয় করে থাকেন। তাই পুণ্য কাজ করলে ভালো আর পাপ কাজ করলে মন্দ ভোগ করতে হয়। পাপ-পুণ্যের আবর্তে জীব-পুরুষকে জন্মচক্রে পাক খেতে হয়। তাই কর্ম হলো জীবের গতি, কর্ম হলো জীবের মুক্তি। কর্মই স্থির করে দেবে জীব-পুরুষের অবস্থান।’- (বৃহদারণ্যক-৩/২/১৩)।

অর্থাৎ পূর্বজন্মের কর্মফলই নির্ধারণ করে দিচ্ছে এজন্মে কিভাবে এই ফল ভোগ করতে হবে, এই জন্মে সুখ ভোগ করবে, না কি দুঃখ ভোগ করবে। তৎকালীন সামাজিক ব্যবস্থা- শোষক-শোষিত, প্রভু-ভৃত্য প্রথার- দৃঢ় সমর্থক বাদরায়ণও একে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে বলেছেন-

(বৈষম্যনৈর্ঘৃণ্যে ন, সাপেক্ষত্বাৎ, তথা হি দর্শয়তি), ‘জগতে সুখ দুঃখাদি দেখে ব্রহ্মকে পক্ষপাতযুক্ত বা নিষ্ঠুর বলা যায় না- কারণ শাস্ত্রে এই বৈষম্যের হেতু এবং ব্রহ্মের স্বরূপ প্রদর্শিত হয়েছে।’- (ব্রহ্মসূত্র-২/১/৩৪)।

এবং জীবের এই কর্মফল দাতা যে ঈশ্বরই, তা স্পষ্ট সিদ্ধান্ত করেই তিনি বলেন-

‘ফলমতঃ, উপপত্তেঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/২/৩৮)।।
ভাবার্থ : জীবের কর্মফলদাতা যে ঈশ্বর তাই যুক্তিসিদ্ধ সিদ্ধান্ত (ব্রঃ-৩/২/২৮)।

এখানে হয়তো একটি আপত্তি উঠতে পারে যে, কর্ম তো একটা সময়ে করা হয়ে থাকে, তার আবার আগের জগতের কথা কী করে আসে ? কিংবা প্রশ্নটি এভাবেও হতে পারে যে, যেহেতু প্রথম সৃষ্টির পূর্বে জীবাত্মার পক্ষে তার পূর্বে কোন অবস্থান সম্ভব নয়, তাই কর্মফল থাকাও সম্ভব নয়, তাহলে প্রথম সৃষ্টির সময়েই জীবের মধ্যে অবস্থার পার্থক্য আসবে কোত্থেকে- যদি না ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করে এই ভেদ সৃষ্টি করে থাকেন ? এই আপত্তির উত্তরে বাদরায়ণ বলেন যে, সৃষ্টি অনাদি, অতএব কর্মও অনাদি-

(ন কর্মাবিভাগাদিতি চেৎ, ন, অনাদিত্বাৎ), ‘সৃষ্টির পূর্বে জীব ও ব্রহ্মের কোন ভেদ ছিলো না। সৃষ্টির সময়েই ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব করে ভেদ সৃষ্টি করেছেন যদি এরূপ বলা হয়, তাহলে এর উত্তরে বলা যায় যে, না জীবজগৎও অনাদি।’- (ব্রহ্মসূত্র-২/১/৩৫)।

পুনর্জন্মের বিষয়ে বাদরায়ণ উপনিষদের সিদ্ধান্তকে সু-ব্যবস্থিতরূপে একত্রিত করেছেন। ছান্দোগ্য উপনিষদের (ছাঃ-৫/১০/৭) শ্রুতিতে সুকৃতি-দুষ্কৃতির মাধ্যমে পুনর্জন্মের যে ধারণা অভিপ্রেত হয়েছে, তার থেকেই পরবর্তী উপনিষদগুলিতে জীবের পুনর্জন্মচক্রের একটা দার্শনিক রূপরেখাও তৈরি হয়ে গেছে। যেমন, প্রশ্ন-উপনিষদে বলা হয়েছে-

‘তেজো হ বা উদানঃ তস্মাৎ উপশানততেজাঃ। পুনর্ভবম্ ইন্দ্রিয়ৈঃ মনসি সম্পদ্যমানৈঃ’। (প্রশ্নোপনিষদ-৩/৯)।। ‘যৎ চিত্তন্তেনঃ এষঃ প্রাণম্ আয়াতি। প্রাণঃ তেজসা যুক্তঃ সহাত্মনা যথাসঙ্কল্পিতং লোকং নয়তি’। (প্রশ্নোপনিষদ-৩/১০)।।
অর্থাৎ :
অগ্নিই উদান। মানুষের যখন মৃত্যু হয় তখন তার শরীর শীতল হয়ে যায়। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় তখন মনে লীন হয় এবং সে জন্মান্তরের জন্য প্রস্তুত হয় (প্রশ্ন-৩/৯)। মৃত্যুকালে জীবাত্মা প্রাণে প্রবেশ করে। সঙ্গে থাকে মন এবং সেই সময়কার মনের যত সংস্কার বা চিন্তা ও বাসনা সমূহ। প্রাণ তখন অগ্নি অর্থাৎ উদানের সঙ্গে যুক্ত হয় (কেননা উদানই তাকে দেহের বাইরে নিয়ে যায়)। আত্মা যে লোক কামনা করে প্রাণ তাকে সেই লোকেই নিয়ে যায়। তারপরে আত্মা নতুন জন্ম গ্রহণ করে (প্রশ্ন-৩/১০)।

এই ধারণারই আরেকটু বিস্তৃত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় বৃহদারণ্যক উপনিষদে-

‘স যত্র অয়মাত্মাহ্বল্যং ন্যেত্য সংমোহমিব ন্যেতি অথৈনমেতে প্রাণা অভিসমায়ন্তি স এতাস্তেজোমাত্রাঃ সমভ্যাদদানো হৃদয়মেব অন্ববক্রামতি ষ যত্রৈষ চাক্ষুষঃ পুরুষঃ পরাঙ্ পর্যাবর্ততে, অথ অরূপজ্ঞ ভবতি’। (বৃহদারণ্যক-৪/৪/১)।। ‘একীভবতি ন পশ্যতীতি আহুঃ, একীভবতি ন জিয়তীতি আহুঃ, একীভবতি ন রসয়ত ইতি আহুঃ, একীভবতি ন বদতীতি আহুঃ, একীভবতি ন শৃণোতীতি আহুঃ, একীভবতি ন মনুতে ইত্যাহুঃ, একীভবতি ন স্পৃশতীতি আহুঃ একীভবতি ন বিজানাতীত্যাহুঃ। তস্য হি এতস্য হৃদয়স্যাগ্রং প্রদ্যোততে, তেন প্রদ্যোতেন এষ আত্মা নিষ্ক্রামতি চক্ষুষ্টো বা মূর্ধ্নো বা অন্যেভ্যো বা শরীরদেশেভ্যঃ। তং উৎক্রমন্তং প্রাণোহনুৎক্রামতি, প্রাণমনুৎক্রামন্তং সর্বে প্রাণা অনুৎক্রামন্তি, সবিজ্ঞানো ভবতি, সবিজ্ঞানমেব অন্ববক্রামতি। তং বিদ্যাকর্মণী সমন্বারভেতে পূর্বপ্রজ্ঞা চ’। (বৃহদারণ্যক-৪/৪/২)।। তদ্ যথা তৃণজলায়ুকা তৃণস্যান্তং গত্বাহন্যমাক্রমম্ আক্রম্যাত্মানম্ উপসংহরত্যেবং এবায়মাত্মা ইদং শরীরং নিহত্যাহবিদ্যাং গময়িত্বাহন্যমাক্রমং আক্রম্যাত্মানং উপসংহরতি’। (বৃহদারণ্যক-৪/৪/৩)।।
অর্থাৎ :
এই শারীর-পুরষ আত্মা দুর্বলতার কারণে যখন সংজ্ঞালোপ পাবার মতো অবস্থায় আসে তখন সবকটি প্রাণ অর্থাৎ ইন্দ্রিয় এসে জড়ো হয় আত্মার কাছে। যে তেজশক্তি নিয়ে ইন্দ্রিয়রা ছিলো প্রকাশমান, করছিলো আপন-আপন নির্দিষ্ট কাজ, তাদের সেই তেজকে নিয়ে প্রবেশ করে হৃদয়ে। সঙ্গত কারণেই চাক্ষুষ-পুরুষ আদিত্যের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে, চোখ আর কেমন করে রূপ দেখবে ? তাই মুমূর্ষুর চোখে কোন রূপই ধরা পড়ে না (বৃঃ-৪/৪/১)। আত্মার সঙ্গে এক হয়ে মিশে গেলে, স্বতন্ত্র অস্তিত্ব না থাকলে কি আর স্বাতন্ত্র্য থাকে ? একীভূত হয়ে থাকার ফলে, লোকে বলে শুনতে, চিন্তা করতে, স্পর্শ করতে পারছে না, কিছু জানতেও পারছে না। সেই সময় তার হৃদয়ের অগ্রভাব দীপ্তিযুক্ত হয়ে ওঠে, প্রকাশিত হয় হৃদয়পথে নির্গমন দ্বার। দেহকে ছেড়ে জ্যোতির সাহায্যে সেই আত্মা জীবের কামনা অনুযায়ী অনুরূপ পথ দিয়ে বেরিয়ে যান। যদি তার সাধনা থাকে আদিত্যলোকের তবে আত্মা নিষ্ক্রান্ত হন চক্ষুপথে, ব্রহ্মলোকের জন্য ব্রহ্মতালু পথে, আবার নানা-বাসনা, নানা কর্মানুসারে অনুরূপ অপরাপর ইন্দ্রিয়পথে। আত্মা নির্গত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যপ্রাণ তাঁর অনুগমন করে, সেই সঙ্গে অপরাপর প্রাণ অর্থাৎ ইন্দ্রিয়ও তাঁর অনুগমন করে। আত্মা তখন বিজ্ঞানময়। এই বিজ্ঞানময় আত্মার অনুগমন করে বিদ্যা, কর্ম আর সংস্কার (বৃঃ-৪/৪/২)। জলায়ুক বা জলৌকা অর্থাৎ জোঁক যেমন ঘাসের এক ডগা ছেড়ে আর এক ডগায় গিয়ে নিরাপদ আশ্রয় নেয়, আত্মাও তেমনি দেহত্যাগের পর অবিদ্যা দূর করে, স্থূল শরীরটাকে পরিত্যাগ করে আশ্রয়রূপ অন্য দেহকে অবলম্বন করে (বৃহদারণ্যক-৪/৪/৩)।

এই শ্রুতিকেই প্রামাণ্য স্বীকার করে তাই বাদরায়ণও বলেন-

‘তদন্তরপ্রতিপত্তৌ রংহতি সম্পরিষ্বক্তঃ, প্রশ্ননিরূপণাভ্যাম্’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১)।।
‘প্রাণগতেশ্চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/৩)।।
অর্থাৎ :
জীব সূক্ষ্মভূত-সমন্বিত হয়ে দেহত্যাগান্তে অন্যদেহ প্রাপ্তির জন্য গমন করে- তা শ্রুতি বর্ণিত প্রশ্নোত্তর থেকে অবগত হওয়া যায় (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১)। বৃহদারণ্যক শ্রুতি বলেন যে, জীব উৎক্রান্ত হলে জীবের সাথে ইন্দ্রিয়সকলও গমন করে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/৩)।

এই প্রাণসকল বা সূক্ষ্ম ইন্দ্রিয়সহ উৎক্রান্ত জীব কোথায় গমন করে ? এর একটা বিবরণ ছান্দোগ্য উপনিষদেই পাওয়া যায়। যেমন-

‘স জাতো যাবৎ-আয়ুষম্ জীবতি তং প্রেতং দিষ্টমিতম্ অগ্নয়ঃ এব হরন্তি যত এবেতো যতঃ সম্ভূতো ভবতি’। (ছান্দোগ্য-৫/৯/২)।। ‘তদ্ য ইত্থং বিদুর্যে চ ইমে অরণ্যে শ্রদ্ধা তপ ইত্যুপাসতে তে অর্চিষম্ অভিসংভবন্তি অর্চিষঃ অহঃ অহ্নঃ আপূর্যমাণপক্ষম্ আপূর্যমাণপক্ষাদ্ যান্ ষট্ উদঙ্ এতি মাসাংস্তান্’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/১)।। ‘মাসেভ্যঃ সংবৎসরং সংবৎসরাৎ আদিত্যম্ আদিত্যাৎ চন্দ্রমসং চন্দ্রমসো বিদ্যুতং তৎ পুরুষঃ অমানবঃ স এনান্ ব্রহ্ম গময়তি এষঃ দেবযানঃ পন্থাঃ ইতি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/২)।। ‘অথ য ইমে গ্রাম ইষ্টাপূর্তে দত্তম্ ইতি উপাসতে তে ধূমম্ অভিসম্ভবন্তি ধূমাৎ রাত্রিম্ রাত্রেঃ অপরপক্ষম্ অপরপক্ষাৎ যান্ ষট্ দক্ষিণা এতি মাসাংস্তান্নৈতে সংবৎসরম্ ন অভি প্রাপ্নুবন্তি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৩)।। ‘মাসেভ্যঃ পিতৃলোকং পিতৃলোকাৎ আকাশম্ আকাশাৎ চন্দ্রমসম্ এষঃ সোমো রাজা তৎ দেবানাম্ অন্নম্ তং দেবা ভক্ষয়ন্তি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৪)।। ‘তস্মিন্ যাবৎ সম্পাতম্ উষিত্বা অথ এতম্ অধ্বানম্ এব পুনঃ নিবর্তন্তে যথা ইতম্ আকাশম্ আকাশাৎ বায়ুম্ বায়ুঃ ভূত্বা ধূমঃ ভবতি ধূমঃ ভূত্বা অভ্রং ভবতি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৫)।।
অর্থাৎ :
(সন্তান) জন্মগ্রহণ করে যতদিন তার আয়ু ততদিন জীবিত থাকে। (তারপর যখন) যথানির্দিষ্ট রূপে (অর্থাৎ কর্মফল অনুযায়ী লোক লাভের জন্য) দেহত্যাগ করে, তখন (তার পুত্র ও শিষ্যরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য) তাকে ঘর থেকে সেই অগ্নিতে নিয়ে যায়- যে অগ্নি থেকে সে এসেছে, যে অগ্নি থেকে সে উৎপন্ন হয়েছে (ছাঃ-৫/৯/২)। যাঁরা পঞ্চাগ্নিবিদ্যা জানেন এবং যাঁরা অরণ্যে বাস করে শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে তপস্যাদি করেন, তাঁরা মৃত্যুর পর অর্চিলোক অর্থাৎ জ্যোতির্লোক প্রাপ্ত হন। (অতঃপর) অর্চি থেকে দিনে, দিন থেকে শুক্লপক্ষে, শুক্লপক্ষ থেকে উত্তরায়ণের ছয় মাসে- (ছাঃ-৫/১০/১)। সেখান থেকে সংবৎসরে, সংবৎসর থেকে আদিত্যে, আদিত্য থেকে চন্দ্রলোকে এবং চন্দ্রলোক থেকে বিদ্যুৎ-লোক প্রাপ্ত হন। সেই স্থানে (ব্রহ্মলোক থেকে) এক অমানব অর্থাৎ জ্যোতির্ময় পুরুষ এসে তাদের ব্রহ্মলোকে নিয়ে যায়। এই পথই দেবযান অর্থাৎ দেবলোকের পথ (ছাঃ-৫/১০/২)। আর যে সকল গৃহস্থ যজ্ঞ, সমাজসেবামূলক কর্ম এবং দান ইত্যাদি অনুষ্ঠান করেন তাঁরা (মৃত্যুর পর) ধূমকে প্রাপ্ত হন। (তারপর তাঁরা) ধূম থেকে রাত্রি, রাত্রি থেকে কৃষ্ণপক্ষ, কৃষ্ণপক্ষ থেকে দক্ষিণায়ণের ছয়মাসে গমন করেন। এঁরা (দেবযানপথে গমনকারীদের মতো) সংবৎসরকে প্রাপ্ত হন না (ছাঃ-৫/১০/৩)। দক্ষিণায়ণের ছয়মাস থেকে পিতৃলোকে, পিতৃলোক থেকে আকাশে, আকাশ থেকে চন্দ্রলোকে গমন করেন। ইনিই (অর্থাৎ উজ্জ্বল চন্দ্রই) রাজা সোম। ইনি দেবতাদের অন্ন, দেবতারা এঁকে ভোগ করেন (ছাঃ-৫/১০/৪)। কর্মফল ক্ষয় না হওয়া পর্যন্ত চন্দ্রলোকে বাস করে তারপর যে পথে তাঁরা গিয়েছিলেন সেই পথেই পুনরায় (পৃথিবীতে) ফিরে আসেন। তাঁরা প্রথমে আকাশ ও পরে বায়ুকে প্রাপ্ত হন। বায়ু হয়ে ধূম, ধূম হয়ে কুয়াশা হন (ছান্দোগ্য-৫/১০/৫)।

শ্রুতিতে এই যে জীবের উৎক্রমণের পর আবার কর্মফল ভোগের জন্য পৃথিবীতে অবতরণ প্রক্রিয়া বর্ণিত হয়, তাই বাদরায়ণও বলেন-

‘কৃতাত্যয়ে অনুশয়বান্, দৃষ্টস্মৃতিভ্যাম্ যথেতমনেবং চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/৮)।।
ভাবার্থ : শ্রুতি-স্মৃতি থেকে জানা যায় যে, জীব যে-পথে চন্দ্রলোকে গিয়েছিলো, কর্মফল ভোগের পর আবার সেই পথেই এবং অন্যভাবেও ভুক্তাবশিষ্ট কর্মসহ পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করে (ব্রঃ-৩/১/৮)।

কিন্তু এখানে প্রশ্ন আসে যে, এ সকল ব্যক্তির আত্মা কি বাস্তবিকপক্ষে আকাশ, ধূম ইত্যাদির সঙ্গে অভিন্ন হয়ে যায়, অথবা এরা কি একটি প্রকৃতিগত সাদৃশ্য প্রাপ্ত হয় ? বিষয়টি স্পষ্ট করতে সূত্রকার বাদরায়ণ বলেন-

‘তৎসাভাব্যাপত্তিঃ, উপপত্তেঃ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২২)।।
ভাবার্থ : চন্দ্রমণ্ডল হতে অবতরণকালে জীব আকাশাদির সদৃশ হয়। আকাশস্বরূপ হয় না- কারণ সদৃশ হওয়াই যুক্তিসঙ্গত (ব্রঃ-৩/১/২২)।

অর্থাৎ, শ্রুতিটিতে আকাশ ইত্যাদির সাথে অভিন্নত্বের কথা বলা হয়নি। শ্রুতিটির অর্থ হলো, এরা আকাশ ইত্যাদির প্রকৃতিগত একটি সাদৃশ্য প্রাপ্ত হয়- আকাশ, বায়ু প্রভৃতির মতো হয়ে যায়। তার মানে, জীব আকাশের মতো একটি সূক্ষ্ম আকার ধারণ করে বায়ুর অধীনে আসে এবং ধূম ইত্যাদির সাথে সংযুক্ত হয়। এই পুনর্জন্ম প্রক্রিয়ায় তারপরে ছান্দোগ্য উপনিষদে আরো বলা হয়েছে-

‘অভ্রং ভূত্বা মেঘো ভবতি মেঘো ভূত্বা প্রবর্ষতি ত ইহ ব্রীহি-যবাঃ ওষধি-বনস্পতয়ঃ তিলমাষাঃ ইতি জায়ন্তে অতঃ বৈ খলু দুর্নিষ্প্রপতরং যঃ যঃ হি অন্নম্ অত্তি যঃ রেতঃ সিঞ্চতি তৎ ভূয়ঃ এব ভবতি’। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৬)।।
অর্থাৎ :
কুয়াশা হয়ে মেঘ হন, মেঘ হয়ে বর্ষণ করেন। তারপর জীবগণ এই পৃথিবীতে ব্রীহি, যব, ওষধি, বনস্পতি, তিল ও মাষ ইত্যাদি রূপে জাত হন। এই শষ্যাদি থেকে নিষ্ক্রমণ দুঃসাধ্য। (সন্তান উৎপাদনে সমর্থ) যে যে প্রাণী ওই (ব্রীহি প্রভৃতি) অন্ন আহার করে এবং সন্তান উৎপন্ন করে, সেই সেই প্রাণিরূপে জীবগণ পুনরায় জন্মগ্রহণ করে (ছান্দোগ্য-৫/১০/৬)।

এখানে একটি প্রশ্ন উঠে যে, চন্দ্রলোক হতে প্রত্যাবর্তনকারী জীবাত্মা যখন আকাশ, বায়ু প্রভৃতির সাথে সাদৃশ্যপ্রাপ্ত হয় তখন কি তা বেশ দীর্ঘকালই ঐ অবস্থায় থাকে, না কি শীঘ্রই এক অবস্থা হতে অবস্থান্তর প্রাপ্ত হয় ? এবং অন্য প্রশ্নটি হলো, জীবাত্মা কি ব্রীহি ইত্যাদি উদ্ভিজ্জরূপে জাত হয় ? এ প্রেক্ষিতে বাদরায়ণ বলেন-

‘নাতিচিরেণ, বিশেষাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৩)।।
‘অন্যাধিষ্ঠিতে পূর্ববৎ, অভিলাপাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৪)।।
‘রেতঃ-সিক্-যোগঃ অথ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৬)।।
‘যোনেঃ শরীরম্’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৭)।।
ভাবার্থ :
শ্রুতি বলেন জীবের চন্দ্রলোক হতে নানা অবস্থার (ব্রীহি, যব ইত্যাদি) মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে আসতে বেশি বিলম্ব হয় না। এ বিষয়ে বিশেষ শ্রুতি তাই বলেন (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৩)। জীব ব্রীহি ইত্যাদি রূপ প্রাপ্ত হয় বলা হয়েছে; তার অর্থ হলো সেই সেই ব্রীহিতে অবস্থান হয় মাত্র, কারণ শ্রুতিতে এ প্রসঙ্গে আকাশাদি সম্বন্ধে যেরূপ উল্লেখ আছে, ব্রীহির সম্বন্ধেও সেরূপই উল্লেখ আছে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৪)। চন্দ্রলোক-প্রত্যাগত জীব ধান ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার পর যারা শুক্রনিষেক করে জন্মদান করতে সমর্থ তাদের দেহে প্রবিষ্ট হয় (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৬)। যোনিকে (গর্ভকে) আশ্রয় করেই জীব স্বীয় ভোগায়তনদেহ লাভ করে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/২৭)।।

অতএব, সংক্ষিপ্ত করে বললে, দেহত্যাগান্তে পরলোক ভ্রমণ করে প্রত্যাগত জীব কর্মফল অনুযায়ী ইহলোকে পুনরায় জীবন শুরু করে। পুণ্যবানগণ চন্দ্রলোকে যান। নবকলেবর ধারণের জন্য চন্দ্রমা থেকে মেঘ, জল, অন্নাদির যে রাস্তার কথা উপনিষদে বলা হয়েছে তাতে ফিরে আসতে দেরি হয় না। যে ধান্যশস্যাদির সঙ্গে জীব মাতৃগর্ভে প্রবিষ্ট তাতে সে নিজে নয়, অন্যজীবের অধিষ্ঠাতা হওয়ার সময় এরূপ করে। সুতরাং অবতরণকারী জীবাত্মা অন্য জীবাত্মার দ্বারা (সঞ্জীবিত) প্রাণবন্ত বৃক্ষাদির মধ্যে অবস্থান মাত্র করে- যে পর্যন্ত না নতুন কোন জন্মের সুযোগ পায়। সেই শস্য ভক্ষণের পর আবার রক্ত-বীর্য-যোনির সংযোগ হয়, যার ফলে হয় নতুন শরীর সৃষ্টি। অর্থাৎ পরিশেষে জীবাত্মা একজন সন্তান-উৎপাদনসক্ষম (রেতঃসিঞ্চনকারী) পুরুষের সংস্পর্শে এসে নারীর গর্ভে প্রবেশ করে এবং সেখানে একটি নতুন দেহ লাভ করে, যে দেহ (ছান্দোগ্য-৫/১০/৭ অনুযায়ী) পূর্ব-কৃত-কর্মের ভুক্তাবশিষ্ট ফল ভোগ করার জন্য সমর্থ।
এখানে আরেকটি প্রশ্ন উঠে যে, ইহলোক থেকে যারা উৎক্রমণ করে তাদের সকলেই কি চন্দ্রলোকে গমন করে থাকে ? যে-সকল জীবের কর্মফল চন্দ্রলোক গমনের পক্ষে যথেষ্ট নয়, অর্থাৎ যারা যজ্ঞাদি বা কোন ধর্মানুষ্ঠান করে না, কিংবা অনিষ্টকারী ব্যক্তি, মৃত্যুর পর তাদের কী গতি হয় ? এ বিষয়ে ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে-

‘অথ এতয়োঃ পথোর্ন কতরেণচন তানীমানি ক্ষুদ্রাণি অসকৃৎ আবর্তীনি ভূতানি ভবন্তি জায়স্ব ম্রিয়স্ব ইতি এতৎ তৃতীয়ং স্থানম্ তেন অসৌ লোকঃ ন সম্পূর্যতে তস্মাৎ জুগুপ্সেত’।। (ছান্দোগ্য-৫/১০/৮)।।
অর্থাৎ :

যারা (অর্থাৎ যে জীবগণ উপাসনা বা ইষ্টপূর্তাদি কর্ম করে না) উভয় পথের কোন পথ দিয়েই যায় না, তারা পুনঃ পুনঃ (জন্ম-মৃত্যু চক্রে) আবর্তনশীল ক্ষুদ্র প্রাণিরূপে জন্মগ্রহণ করে। (এদের বিষয়ে বলা যায়)- জন্মাও আর মরো (অর্থাৎ এরা এতো ক্ষণস্থায়ী যে জন্মগ্রহণ করেই মরে যায়। জন্ম-মৃত্যু ছাড়া এদের জীবনে অন্য কোন ঘটনা নেই)। এই হলো তৃতীয় স্থান। এজন্যেই এই লোক (অর্থাৎ স্বর্গ বা চন্দ্রলোক) পূর্ণ হয় না। সুতরাং (এই গতিলাভকে) ঘৃণা করবে (ছান্দোগ্য-৫/১০/৮)।

অর্থাৎ অনিষ্টকারী ব্যক্তি স্বর্গে গমন করে না। তাহলে কোথায় যায় ? সংশয় দূর করতে বাদরায়ণ বলেন-

‘সংযমনে তু অনুভূয় ইতরেষাম্ আরোহাবরোহৌ, তদ্গতিদর্শনাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৩)।।
ভাবার্থ : অনিষ্টকারী ব্যক্তি যমলোকে গমন করে; কারণ অনিষ্টকারীর সংযমী নামক যমপুরে যাওয়ার কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে (ব্রঃ-৩/১/১৩)।

কারণ, কঠ উপনিষদে বলা হয়েছে-

‘ন সাম্পরায়ঃ প্রতিভাতি বালং প্রমাদ্যন্তং বিত্তমোহেন মূঢ়ম্ ।
অয়ং লোকো নাস্তি পর ইতি মানী পুনঃ পুনর্বশম্ আপদ্যতে মে’।। (কঠোপনিষদ-১/২/৬)।।
অর্থাৎ :

যম বলছেন, সংসারী মানুষ মাত্রই নিজ নিজ পরিবারের প্রতি অতিশয় আসক্ত। ধন-সম্পদের মোহ তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তাদের বুদ্ধি অপরিণত। তারা তাদের চারপাশের জগৎকেই একমাত্র সত্য বলে মনে করে। এর বাইরেও যে একটা জগৎ আছে, সে খোঁজ রাখে না। ইহলোকই আছে, পরলোক বলে কিছু নেই- যে-ব্যক্তি এ কথা মনে করে সে বারবার আমার অধীন হয়। অর্থাৎ তার পুনঃ পুনঃ জন্মমৃত্যু ঘটে থাকে (কঠ-১/২/৬)।

চন্দ্রলোকে আরোহণ শুধুমাত্র শুভকর্মের ফল ভোগেরই জন্য- অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়। সুতরাং অনিষ্টকারিরা চন্দ্রলোকে যায় না। তাদের গন্তব্য হয় নরকে। কৃতকর্মের কষ্টভোগের মাধ্যমে পাপমুক্ত হয়ে পূর্ব-কৃত-কর্মের ভুক্তাবশিষ্ট ফল ভোগ করার জন্য পুনরায় জন্মগ্রহণ করে জীব দেহধারী হয়। তাই বাদরায়ণ বলেন-

‘স্মরন্তি চ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৪)।।
‘অপি চ সপ্ত’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৫)।।
‘বিদ্যাকর্মণোঃ ইতি তু প্রকৃতত্বাৎ’।। (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৭)।।
ভাবার্থ :
স্মৃতিশাস্ত্রেও (যথা মনুস্মৃতি) পাপীদের নরক গমনের কথা দৃষ্ট হয় (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৪)। অধিকন্তু পাপীদের ভোগের জন্য সাতটি নরক আছে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৫)। পাপীদের চন্দ্রলোকে গমন হয় না, কারণ, বিদ্যাদ্বারা দেবযান এবং কর্মের দ্বারা পিতৃযান প্রাপ্তির কথা শাস্ত্রে উল্লেখ আছে (ব্রহ্মসূত্র-৩/১/১৭)।

জ্যোতিষ শাস্ত্র সম্বন্ধে কয়েকটি কথা

জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে মানুষের সন্দেহ, অবিশ্বাস ও একই সঙ্গে কৌতূহলও অপরিসীম। যে কোনো মানুষেরই তার নিজের বা আপনজনের ভবিষ্যৎ জীবনের ঘটনা জানবার ইচ্ছা স্বাভাবিক। বিশেষ করে বিপদ-আপদ ও সঙ্কটের সময়ে মানুষের এই ইচ্ছা আরও প্রবল হয়ে ওঠে। যারা ক্খনই এই বিষয়ে জানতে ইচ্ছুক নন বা ঘোর অবিশ্বাসী তাদের জন্য এই আলোচনা নয়। কিন্তু যারা বাতিকগ্রস্ত নন বা ঘন ঘন জ্যোতিষের কাছে ছুটে যান না, তাদেরও একটা অংশ খোলা মন নিয়ে বিষয়টি জানতে চান এবং নিজেদের মত বিচার বিশ্লেষণ করে এর মূল্যায়নে আগ্রহী। তাদের জন্যই এই প্রয়াস। একজন মানুষের জীবনে অসংখ্য ঘটনা ঘটে। ধরা যাক, এর মধ্যে নির্দ্দিষ্ট্ভাবে সময় উল্লেখ করে ৫ টি ঘটনার কথা কেউ ভবিষ্যৎবাণী করলেন এবং দেখা গেল শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে এই ৫ টির মধ্যে একটি দুটিও মিলে যাচ্ছে; তা হলেই কিন্তু বিষয়টি সম্বন্ধে কৌতূহল জাগা স্বাভাবিক। সময় এবং সুযোগ থাকলে এই কৌতূহল মেটানোর চেষ্টার পিছনে কোনো অবৈজ্ঞানিক বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন কাজ করে বলে মানা যায় না। বরং কোন বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান ছাড়াই তা নিয়ে ইতিবাচক বা নেতিবাচক মন্তব্য করাটাই বিজ্ঞানমনস্কতার পরিপন্থী বলে মনে হয়।

জ্যোতিষ্শাস্ত্র হয়ত ঠিক গণিতশাস্ত্রের মত একক এবং নির্দ্দিষ্টভাবে লক্ষ্যে পৌঁছনর কথা বলে না। দীর্ঘকাল ধরে কিছু স্মৃতি ও শ্রুতির মাধ্যমে গৃহীত এবং কিছু লিপিবদ্ধ সূত্রের আকারে প্রাপ্ত এই শাস্ত্রের নীতিগুলি যে ভাবে আজ সামগ্রিকভাবে সংগৃহীত হয়ে ছাপার অক্ষরে পরিবেশিত, তার মধ্যে মতভেদ ও অস্পষ্টতা অনেক। তবে খুব সূক্ষ বিশ্লেষণের জটিলতার মধ্যে প্রবেশ না করেও কতকগুলি ক্ষেত্রে কিছু সুনির্দ্দিষ্ট ফলাফলের আভাস পাওয়া সম্ভব বলে মনে হয়।

মনে একটা প্রশ্নের উদয় হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। সেটা হ’ল, আকাশে আবর্তিত গ্রহমণ্ডলীর অব্স্থান কোটি কোটি লোকের প্রত্যেকের জীবনে কী ঘটনা ঘটবে তার সঙ্গে কী ভাবে সম্পর্কিত ? অনেকে জোয়ার ভাটার উপর চন্দ্রের প্রভাব ব্যাখ্যা করে এর উত্তর দিতে সচেষ্ট হন। কিন্তু দুটো এক জিনিষ নয়। কোন একজনের ভবিষ্যৎ জীবনের ঘটনা বহুদূরে অবস্থিত কোনো গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বলের তারতম্যের দ্বারা চালিত হচ্ছে এটা খুব কষ্টকল্পিত। তাও আবার রাহু ও কেতু কোনো গ্রহই নয়; তার আবার মাধ্যাকর্ষণ কি ? তা হলে এর সম্ভাব্য ব্যাখ্যা কি ?

প্রথমেই বলা ভাল, এর ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে দু’টি জিনিস গ্রহণ করতে হবে। এক, আমরা প্রথাগত পাঠক্রম অনুসরণ করে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যা শিখেছি, তার বাইরে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু গ্রহণ করার মত মানসিক প্রসারতা ও প্রস্তুতি। দুই, বহু শতাব্দী পূর্বে যে সব মনীষী জন্মেছেন এবং ধ্যান, জ্ঞান ও মননশীলতার দ্বারা যে সত্যকে তারা উপলব্ধি করেছেন তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যথাযথ বিশ্লেষণের ভিতর দিয়ে কোনো বিষয়ের মর্মোদ্ধার করা কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনের দ্বারা সম্ভব নয়। এই প্রসঙ্গে হোমিওপ্যাথি ওষুধের রোগ নিরাময়ের ক্ষমতার কথা মনে আসে। অনেকে হোমিওপ্যাথির দ্বারা রোগ আরোগ্যের কথা স্বীকারই করেন না। যদি কেউ উপকার পান তবে সেটা রোগীর মনের দৃঢ় বিশ্বাসের দ্বারাই সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন। বিশ্লেষণ বা যথাযথ জ্ঞান ছাড়াই এই অস্বীকার করার মানসিকতা কি অন্ধ বিরোধিতা নয় ? এই গোড়ামিও কি এক ধরণের কুসংস্কার নয় ? এর দ্বারা কি সত্য উদ্ঘাটন সম্ভব ? বহু লোক হোমিওপ্যাথি ওষুধের দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন। কি করে এই অণু পরিমাণ ওষুধের দ্বারা সেটা সম্ভব হচ্ছে এখনও তার সঠিক উত্তর নেই। তবে কারণ জানার চেষ্টা চলছে; সম্মিলিত প্রয়াসে এবং গবেষণার দ্বারা কোন দিন হয় ত উত্তর পাওয়া যাবে। এভাবেই বিজ্ঞান এগিয়ে চলে। অস্বীকার করার মানসিকতা নিয়ে এটা করা সম্ভব নয়। এই দৃশ্যমান ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের পাশাপাশি বা ওতপ্রোত ভাবে জড়িত অপর একটি অব্যক্ত ও সূক্ষ্ম নিয়মের দ্বারা চালিত জগতের অস্তিত্ব থাকতেই পারে। তাই বলে, প্রথাগত্ভাবে যে বিদ্যা বা জ্ঞান আমরা অর্জন করেছি তার গুরুত্ত্ব কিছু কম বলে মনে করার কোনো কারণ নেই। দুটোই পাশাপাশি অবস্থান করতে পারে। সামগ্রিক জ্ঞানভাণ্ডারের প্রেক্ষিতে একটিকে অন্যটির পরিপূরক হিসাবেও ভাবা যায়।

জ্যোতিষ বিষয়ে বিদগ্ধ জনেরা মনে করেন, এই শাস্ত্রের ব্যাখ্যা খুঁজতে গেলে জন্মান্তর তত্ত্বে বিশ্বাস প্রয়োজন। প্রতিটি মানুষ জন্মগ্রহণ করছে পূর্বসঞ্চিত কর্ম সংস্কারকে কার্যে পরিণত করবার জন্য। শাস্ত্রমতে কর্মের শক্তি অসীম। কোনো কাঙ্খিত কর্ম একবার আগ্রহের সঙ্গে করলে, সেটা আর একবার করবার ইচ্ছা জন্মায়। বারবার করলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। এই অভ্যাসেরই গাঢ়তর অবস্থা হচ্ছে সংস্কার। সংস্কারের শক্তি হল আপাত ভাবে আমরা না চাইলেও অবশ করে আমাদের দিয়ে তা করিয়ে নেওয়া। এই সংস্কারই আমাদের কর্মে প্রবৃত্ত করে। কোন ধরনের কাজে আমাদের ইচ্ছা বা প্রবৃত্তি তা আমাদের পূর্ব পূর্ব জন্মের সঞ্চিত কর্মফল বা সংস্কারের উপর নির্ভর করে। এটা প্রতিকূল হলে, অনেক চেষ্টাতেও অভীষ্ট ফললাভ হয় না। অনেকে যে অল্প আয়াসেই সফল হয়, তা তারই সঞ্চিত শুভ কর্মফলের সহায়তায়। এটাকেই সাধারণ ভাবে আমরা বলি অদৃষ্ট বা দৈব। কর্মফল তা শুভই হোক বা অশুভই হোক তা ভোগ করতেই হবে। “অবশ্যমেব ভোক্তব্যং কৃতকর্মং শুভাশুভম”। ভোগের দ্বারাই কর্মফলের ক্ষয় হয়-শাস্ত্রকারদের এই হল ব্যাখ্যা। তাঁরা আরও বলেন, নিঃস্বার্থ কর্মদ্বারা, পরহিতকর কর্মানুষ্ঠানের মাধ্যমে বা ঈশ্বরচিন্তায় রত হয়ে আমরা ক্রমশ: অশুভ কর্মফলের সঞ্চয় হ্রাস করতে পারি এবং তা একেবারে লীন করতে পারি। সকাম কর্ম বা কর্মফল প্রাপ্তির ইচ্ছা সহ কর্ম করলেই তা নূতন কর্মফলের জন্ম দেয়। এ ভাবেই মানুষ জন্ম থেকে জন্মান্তরে কর্মফল ভোগ করে চলে। মানুষই তার নিজের কর্মের দ্বারা নিজের ভাগ্য তৈরী করে। এই প্রেক্ষাপটে দেখলেও man is the architect of his own fate কথাটা বর্ণে বর্ণে সত্যি।

কর্মফল ছেড়ে মূল বিষয়ে প্রবেশ করা যাক। প্রত্যেকের জন্মমুহূর্তে গ্রহের অবস্থানসহ তার কোষ্ঠির নক্সাটি এই জন্মের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এর থেকে তার সমস্ত জীবনের ঘটনাবলী মোটামুটি বলা সম্ভব বলে জ্যোতিষীরা দাবী করেন। প্রত্যেকের পূর্ব পূর্ব জীবনের সঞ্চিত কর্মফল কী ভাবে এ জীবনে ফলদান করতে চলেছে তার একটা আগাম আভাস এই সমস্ত গ্রহের অবস্থান থেকে অনুমান করা যায়। গ্রহগুলি প্রতীক মাত্র; মূলে আছে জাতকের নিজের সঞ্চিত কর্মফল। প্রশ্ন উঠতেই পারে, এই পূর্বাভাস কে জানাচ্ছে এবং কার স্বার্থে ? বলা যেতে পারে, পরম মঙ্গলময় ঈশ্বর এই পূর্বাভাসের মাধ্যমে প্রত্যেককে একটা সুযোগ দিচ্ছেন যাতে সে পূর্ব জন্মের কর্মফল সম্বন্ধে অবহিত হয়ে তার ইহ জীবনের কর্ম ঠিক পথে চালিত করে নিজেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবার চেষ্টা চালাতে পারে। এটা ঈশ্বরেরই একটি ইচ্ছা। জ্যোতিষশাস্ত্র প্রাচীন বেদেরই একটা অঙ্গ। এটা মূলতঃ ব্যবহৃত হতো শুভ মুহূর্তগুলো নির্ণয় করে, নির্দ্দিষ্ট সময়ে যজ্ঞানুষ্ঠান এবং অন্যান্য পূজা ও আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অভীষ্ট ফল লাভ করার জন্য।

এখনও ফলিত জ্যোতিষের মূল সূত্র ব্যবহার করে অনেক চিকিৎসক রোগীর রোগ কতটা গভীর ও তার পীড়ার সূত্রপাত শরীরের কোন অঙ্গে সেটা জানার চেষ্টা করেন এবং তার ভিত্তিতে চিকিৎসার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে এর বহুল ব্যবহার দৃষ্ট হয়। এই চিকিৎসক্দের অনেকে medical astrology বিষয়ে বই লিখেছেন। কয়েক দশক আগে কোলকাতার সন্নিহিত স্থানে এক লব্ধপ্রতিষ্ঠ চিকিৎসক নিয়মিত এই শাস্ত্র চর্চা করতেন তার রোগীদের সাহায্য করবার জন্য।

উপক্রমণিকায় জ্যোতিষ সম্বন্ধে গতানুগতিকতা ও প্রচলিত ধ্যান ধারণার বাইরে কিছু যুক্তি ও তত্ত্বের অবতারণা করতে হলো; না হলে, এই শাস্ত্রের কোন সম্ভাব্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা ছাড়াই এর নিয়মনীতি বিশ্লেষণ করতে হতো। বহু শতাব্দী পূর্বে যখন কোনো দূরবীক্ষণ যন্ত্র ( telescope ) বা গণকযন্ত্র ( computer ) ছিল না , তখন আকাশে আবর্তিত গ্রহ-নক্ষত্রের গতিপথ প্রায় নির্ভুলভাবে নির্ণয় করা এবং তাদের অবস্থান থেকে মানুষের জীবনের ঘটনাবলীর পূর্বাভাস সংক্রান্ত নিয়ম কানুন বর্ণনা করা কি করে সম্ভব হয়েছিল তা সাধারণ বুদ্ধির অগম্য।

যারা এই শাস্ত্রটিকে পেশা হিসাবে বেছে নিতে চান তাদের কথা আলাদা। কিন্তু সাধারণ অনুসন্ধিৎসা ও কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে যারা বিষয়টি জানতে চান এবং এর জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করতে ইচ্ছুক তাদের শাস্ত্র বর্ণিত প্রতিটি শ্লোক ও সূত্র মনে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই – সেটা সম্ভব বলেও মনে হয় না। যে মূল নীতির উপর ভিত্তি করে নানা নিয়ম সূত্রাকরে বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে, সেটা বুঝতে পারলেই হল। এর কিছু ব্যতিক্রম আছে ঠিকই কিন্তু প্রথম শিক্ষার্থীর পক্ষে সেটা জানার প্রয়োজনীয়তা নেই। যারা দ্রুত বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা রাখেন এবং বিষয়ের মূল কিছু নীতি সম্বন্ধে অবহিত, ফলাফল সম্বন্ধে তাদের বক্তব্য অনেক সময়েই মিলে যায়। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। কোন বিষয় সম্বন্ধে অনুসন্ধিৎসু হয়ে জ্ঞানার্জনের চেষ্টা এক জিনিস এবং মানুষের দুর্বলতা বা অসহায়তার সুযোগ নিয়ে ও সীমিত জ্ঞান দ্বারা চালিত হয়ে অর্থোপার্জনের চেষ্টা অন্য জিনিস।

এটা মনে রাখা প্রয়োজন যে, কোন ব্যক্তির জন্মসময়ের গ্রহদের অবস্থান থেকেই তার কোষ্ঠি ইহ জীবনের জন্য নিদ্দির্ষ্ট। অতএব বলা যায় তার জীবনের সমস্ত ঘটনা শাস্ত্রানুসারে ৭ টি গ্রহ, ২ টি ছায়াগ্রহ ( রাহু ও কেতু ) ও লগ্ন দ্বারা চালিত (এখানে ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটোকে আলোচনার মধ্যে রাখা হয় নি)। সাধারণ ভাবেই বোঝা যায় যে, মাত্র এই কয়টি গ্রহের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে কোনো ব্যক্তির জীবনের প্রতিটি ঘটনাবলী সম্বন্ধে পূর্বাভাস দেওয়া প্রায় অসম্ভব বললেও চলে। তবে জীবনের প্রধান প্রধান ঘটনা ও তার সময় সম্বন্ধে অনেক সময়েই নির্দ্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছন যায়। জাতক পারিজাত গ্রন্থে একটি শ্লোক আছে যার অর্থ : গ্রহগুলির একের অন্যের উপর প্রভাব এবং তা থেকে উদ্ভূত ফলাফল একমাত্র প্রকৃত জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তির পক্ষেই কিছুটা অনুমান করা সম্ভব। প্রকৃত ঘটনা কি ঘটবে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্ত্তা ঈশ্বরই জানেন। একটি বিদগ্ধ লোকের দ্বারা রচিত বইতেই যদি এই মতামত ব্যক্ত হয়, তবে আজকের অবিশ্বাসের আবহে চঞ্চলমতি ও ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে এই জটিল বিষযের মর্ম্মোদ্ধার করা অত্যন্ত কঠিন এতে সন্দেহ নেই।

ফলিত জ্যোতিষ শাস্ত্রটির যথাযথ প্রয়োগ শুধুমাত্র পুস্তকে লিপিবদ্ধ কিছু নিয়মাবলীর জ্ঞানের ভিত্তিতে করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে বহুদিনের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। বহু কোষ্ঠি পরীক্ষা করতে করতে একটা সূক্ষ্মদৃষ্টি বা intution তৈরী হয় – যা নির্দ্দিষ্টভাবে লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। সবার শেষে বলা যায় যে, কোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জ্জন করতে হলে চাই অদম্য কৌতূহল ও গভীর শ্রদ্ধা। অন্য কোনো মাধ্যম এই প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসূ করতে সাময়িকভাবে কিছুটা সাহায্য করে মাত্র।

এই লেখার উদ্দেশ্য
জ্যোতিষশাস্ত্রে ( astrology ) অনেক খুঁটিনাটি বিষয় আছে। এর কিছু জিনিস অত্যন্ত জটিল। অনেক কৌতূহলী পাঠক আগ্রহ নিয়ে কিছু বই কিনে পড়তে শুরু করেন এবং অনেক সময়েই আলোচ্য বিষয়ে ব্যবহৃত নানা শব্দ ও তার অর্থ ঠিকমত বুঝতে না পেরে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। খুঁটিনাটি বিশ্লেষণের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই রয়েছে কিন্তু প্রথম পাঠকেরা শুরুতেই যাতে এই আবর্তে না পড়ে , কিছু মূল নিয়ম ও প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে জন্মকুণ্ডলী ( horoscope ) নিজেরাই তৈরী ক’রে, ব্যক্তিজীবনের কিছু পূর্বাভাস পেতে পারেন, তার জন্যই এই প্রচেষ্টা। এতে তারা প্রাথমিকভাবে কিছুটা উৎসাহিত হবেন। পরবর্তী পর্যায়ে কেউ বিষয়বস্তুর আরও গভীরে প্রবেশ করবার ইচ্ছা নিয়ে ধীরে ধীরে জটিল জিনিসগুলি জানতে চেষ্টা করতে পারেন। যে সমস্ত পাঠক ইংরাজী বই বা মূল সংস্কৃত শ্লোক পড়তে চান তাদের সুবিধার্থে যথাযথ স্থানে কিছু প্রতিশব্দও দেওয়া হলো।

জ্যোতিষশাস্ত্রে অনেক পদ্ধতি প্রচলিত আছে। তবে অধিকাংশ জ্যোতিষী পরাশর বর্ণিত মতেরই অনুসরণ করেন। এ ছাড়া জৈমিনী, কৃষ্ণমূর্তি ইত্যাদি পদ্ধতিও ব্যবহৃত হয়। অনেকে বিভিন্ন পদ্ধতির সংমিশ্রণের দ্বারাও ফলাফল নির্ণয় করেন। জ্যোতিষ শাস্ত্রের দুটি অংশ। একটির দ্বারা কোন ব্যক্তির জন্মসময়ের গ্রহের অবস্থান এবং পরবর্তী সময়ে তাদের অবস্থান ও গতিপথ নির্ণয় করা হয় – এটা হল জ্যোতির্বিজ্ঞান (astronomy)। অন্যটির দ্বারা গ্রহ সংস্থান থেকে ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ করা হয় – এটা ফলিত জ্যোতিষ (applied astrology)। প্রথমটি নিছক গণিতশাস্ত্র। এটা নিয়ে কারো কোন সংশয় নেই। কিন্তু দ্বিতীয়টির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কিছু লোক দ্বিধাগ্রস্ত।

পরিশেষে একটা কথা। পরবর্তী আলোচনায় যে ভাষা ব্যবহৃত হবে তা অত্যন্ত সহজ সরল এবং অনেক জায়গায় কথ্যভাষা। জ্যোতিষশাস্ত্রের অনেক বইতে যে সাধু ভাষা ব্যবহৃত হয় সেটা পরিহার করা হয়েছে, বিষয়বস্তুকে সহজবোধ্য করার প্রয়োজনে।

ACHARYA KUSH MUKHERJEE
RAMPURHAT CHAKLAMATH BIRBHUM (W.B)
PIN NO 731224
GOLD MEDALIST
WHATSAPP NO 9233172388
CONTACT NO 7001608953
ONLINE PORISEVA DEWA HOI rs 1000/=
MY PAGE NAME IS ASTRO-PALMIST-NEUMEROLOGY CENTER
PLEASE LIKE&SARE
Contact with me :www.apnc.co.in
https://m.facebook.com/Astro-Palmist-Neumerology-Center-1569956439973629/?ref=bookmarks



Blog Url:
https://apnc.co.in/blog.php?blog=20180529094709