শুভ সন্ধ্যা
মোক্ষলাভ
রাজা জন্মেজয় একবার মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন ব্যাসদেবকে প্রশ্ন করেছিলেন, “মহর্ষি! এই জগতে সকলেই নিজ নিজ স্বভাব গুণে কামক্রোধাদি দ্বারা আচ্ছন্ন। তা হলে এই মানব জাতির মুক্তি কি করে হবে?”
উত্তরে মহর্ষি বেদব্যাস ঋষি বলেছেন-
তস্মাৎ সর্ব্বপ্রযত্নেন হিত্বা সংসাররসারতম্ ।
আরাধয়েন্মহেশানীং সচ্চিদানন্দরূপিণীম্ ।।
( দেবীভাগবতপুরাণ / চতুর্থ স্কন্ধ/ ত্রয়োদশঅধ্যায়/ ৩৫)
অর্থাৎ- ঋষি ব্যাস বলছেন, সর্বপ্রযত্নে সংসারের উপরে সারবুদ্ধি পরিত্যাগ করিয়া , সচ্চিদানন্দরূপিণী মহেশ্বরীকে আরাধনা করিবে।
সংসারে সার অসার দুই আছে। ভোগের পথও আছে, মোক্ষের পথও আছে। নিজ নিজ স্বভাব অনুযায়ী মানব দুই পথ বেছে নেয়। কেও কেও ভোগে জীবন যাপন করে, কেও বা সদ্গুরুর আশ্রয় নিয়ে আধ্যাত্মিকতার পথে চলে।
ব্যাস ঋষি এরপর বলছেন-
তন্মায়াগুণরশ্ছন্নং জগদেতচ্চরাচরম্ ।
ভ্রমত্যুন্মত্তবৎ সর্ব্বং মদিরামত্তবন্নৃপ ।।
তস্যা আরাধনেনৈব গুণান্ সর্ব্বান্ বিমৃদ্য চ ।
মুক্তিং ভজেত মতিমান্নান্যঃ পন্থাস্ত্বিতঃ পরঃ ।।
আরাধিতা মহেশানী ন যাবৎ কুরুতে কৃপাম্ ।
তাবদ্ভবেৎ সুখং কস্মাৎ কোহন্যোহস্তি দয়য়া মৃতঃ ।।
করুণাসাগরামেতাং ভজেত্তস্মাদমায়য়া ।
যস্যাস্তু ভজনেনৈব জীবন্মুক্তত্বমশ্নুতে ।।
( দেবীভাগবতপুরাণ / চতুর্থ স্কন্ধ/ ত্রয়োদশঅধ্যায়/ ৩৬-৩৯)
অর্থাৎ- ঋষি বলছেন, হে নৃপ ! এই নিখিল চরাচর জগত তাঁহারই মায়াগুণে আচ্ছন্ন হইয়া মদিরামত্তের ন্যায় উন্মত্তের ন্যায় পরিভ্রমণ করিতেছে । মতিমান ব্যাক্তি তাঁহারই আরাধনা করিয়া সমস্ত গুণকে ( ত্রিগুণ ) দলিত করিলে মুক্তিলাভ করেন। তাছারা মুক্তির আর উপায় নাই। আরাধিতা হয়ে মহেশ্বরী যে অবধি কৃপা না করেন, ততক্ষণ সুখ কোথায় ? তিনি ভিন্ন দয়ালুই বা কে আছে ? অতএব অকপট চিত্তে সেই দয়াময়ীর সেবা করিলে, জীবন্মুক্ত হওয়া যায়।
বেদব্যাস ঋষি , রাজাকে বলেছিলেন যে এই পৃথিবীর সকলেই ত্রিগুণে আচ্ছন্ন হয়ে – ‘আমি বেশ আছি’- এই রকম চিন্তাভাবনা নিয়ে চলে। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত মহেশ্বরী অর্থাৎ দেবী আদিশক্তির শরণ নিয়ে তাঁর আশীর্বাদ না পাওয়া যায়- ততক্ষণ পর্যন্ত সুখ নেই। জাগতিক সুখ ক্ষণস্থায়ী । কিন্তু দেবীকৃপার সুখ চিরন্তন । অকপট অর্থাৎ ক্রোধ- হিংসা- কাম- দম্ভ ইত্যাদি ত্যাগ করে সেই দয়াময়ী অর্থাৎ দেবীর চিত্ত দয়াতে পূর্ণ- সেই দেবীর সেবা করিলে এই জীবভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায়। ব্যাস ঋষি এমনটাই বোঝালেন রাজাকে।