• apnbkm.09@gmail.com
  • +91 9233172388
  • Vidyasagar Pally, Rampurhat
  • Mon-Sat 11:00 A.M - 8:00 P.M

Monday, April 2nd, 2018

Astro Palmist Numerology Center

বুধ গ্ৰহ

বুধ গ্ৰহ



বুধ গ্রহ

সূর্যের সবচেয়ে কাছের এবং সৌরজগতের ২য় ক্ষুদ্রতম গ্রহ বুধ (Mercury)। সুর্যের খুব কাছাকাছি হওয়ায় এবং আকৃতিতে ছোট হওয়ায় পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা কঠিন। তবে বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে পশ্চিমাকাশে সুর্যাস্তের পর এবং পূর্বাকাশে সুর্যাদয়ের ঠিক আগে একবারে দিগন্ত বরাবর বুধকে খালি চোখে দেখা যায়। বুধের ব্যাস প্রায় ৪,৮৮০ কিঃমিঃ (পৃথিবীর চেয়ে ৪০% ছোট এবং আমাদের চাঁদের চেয়ে ৪০% বড়)। এর ভর ৩.৩০ এর পর ২৩টি শুন্য বসালে যা হবে তত কিঃগ্রাঃ।

বুধ এবং পৃথিবীর আকারের তুলনা।

নামকরণঃ
গ্রহ নক্ষত্রের নামকরনের ক্ষেত্রে প্রায় সব ক্ষেত্রেই জ্যোতির্বিদরা পৌরানিক কাহিনীর কাছে হাত পেতেছেন। আর বুধের নামকরন করা হয়েছে রোমান পৌরানিক দেবতা মারকারির (Mercury) নামে; যিনি ছিলেন বানিজ্যের দেবতা। মারকারি দেবতা বানিজ্যর জন্য সর্বদা ছোটাছুটি করতেন। বুধ গ্রহ আকাশে খুব দ্রুত পরিভ্রমণ করে ধারনা করা হয় এ কারনেই এ গ্রহের নাম বুধ (Mercury) রাখা হয়েছে।

সুর্যের সামনে বুধ

বুধ অভিযাত্রাঃ
এ পর্যন্ত দুটি মহাকাশযান বুধ অভিযানে যাত্রা করেছে 'মেরিনার-১০' (Mariner-10) এবং মেসেন্জার (MESSENGER)। মেরিনার-১০, ১৯৭৪ এবং ১৯৭৫ সালের মধ্যে ৩ বার বুধের পাশ দিয়ে উড়ে গেছে। এ সময় মেরিনার-১০ বুধ গ্রহের ৪৫% ছবি তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মেরিনার-১০ সূর্যের বেশি কাছাকাছি চলে যায় এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ২০০৪ সালে নাসা মেসেন্জার উৎক্ষেপন করে বুধের উদ্দেশ্যে যা বুধের চারপাশে কয়েকবার ঘুরপাক খাওয়ার পর ২০১১ সালে এর কক্ষপথে কৃত্তিম উপগ্রহ হিসেবে ঘুরতে থাকবে। ২০০৮ সালে প্রথমবার বুধের পাশ দিয়ে উড়ে যাবার সময় মেসেন্জার কিছু হাই কোয়ালিটি ছবি পাঠিয়েছে যা আগে মেরিনার-১০ পাঠাতে পারেনি।

কক্ষপথঃ
বুধ ডিম্বাকৃতি পথে সুর্যকে প্রদক্ষিণ করে। প্রদক্ষিণকালে বুধ সুর্যের মধ্যকার সবচেয়ে কম দুরত্ব ৪৬ মিলিয়ন কিঃমিঃ এবং সবচেয়ে বেশি দুরত্ব ৭০ মিলিয়ন কিঃমিঃ। গড় দূরত্ব প্রায় ৫৯ মিলিয়ন কিঃমিঃ। সৌরজগতের গ্রহ গুলোর মধ্যে বুধ সবচেয়ে দ্রুতগামী এবং অল্প সময়ে সুর্যকে প্রদক্ষিন করে (৮৮ দিনে)। নিজ অক্ষের উপর বুধের গতি প্রতি সেকেন্ডে ৪৮ কিঃমিঃ।

বুধের দিন-রাতঃ
নিজ অক্ষের উপর বুধের এক বার ঘুরতে প্রায় ৫৯ দিন সময় লাগে। শুক্র গ্রহর পর সৌর জগতের গ্রহ গুলোর ঘুর্ণণের ক্ষেত্রে এ সময় সর্বোচ্চ (অর্থ্যাৎ নিজ অক্ষের উপর একবার ঘুরতে অন্যান্য গ্রহের তুলনায় বুধ ২য় সবোর্চ্চ সময় নেয়)। নিজ অক্ষের উপর ধীর গতির ঘুর্ণণ আর সুর্যের চারপাশে দ্রুতগতির প্রদক্ষিণে দুয়ের কারনে বুধের দিনের দৈর্ঘ্য অনেক বেশি। বুধের এক দিন=পৃথিবীর ১৭৬ দিন!

গঠনঃ
বুধের গঠন অনেকটা আমাদের চাঁদের মত। তবে এর ভূ-পৃষ্ঠ চাঁদের চেয়ে অনেক প্রাচীন এবং অসংখ্য আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ সমৃদ্ধ। জ্বালামুখ গুলোর ব্যাস একশত থেকে হাজার কিঃমিঃ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ৩ কিঃমিঃ পর্যন্ত উঁচু। পৃথিবীর পর সৌরজগতের সর্বোচ্চ ঘনত্বের গ্রহ হল বুধ। বুধের অভ্যন্তর ভাগের বেশির ভাগই হল তরল লোহা। বিজ্ঞানীদের ধারনা কেন্দ্র থেকে ১৮০০ থেকে ১৯০০ কিঃমিঃ ব্যাসার্ধ পর্যন্ত লোহার স্তর বিদ্যমান। এর বাইরের দিকে আছে সিলিকার স্তর। এর বিস্তৃতি ৫০০ থেকে ৬০০ কিঃমিঃ।

তবে বুধের ভু-পৃষ্ঠের অন্যতম বৈশিষ্ট হল "ক্যালরি বেসিন"। বুধের প্রায় পুরো ভু-পৃষ্ঠই এবড়োথেবড়ো, শুধুমাত্র ক্যালরি বেসিন ছাড়া। এই সমতল বেসিনের ব্যাসার্ধ প্রায় ১৩০০ কিঃমিঃ। ধারনা করা হয় সৌরজগতের জন্মলগ্নের সময়ে সৃষ্ট এই বেসিন কোন এক বড় ধরনের মহাজাগতিক সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন।

বায়ুমন্ডল ও তাপমাত্রাঃ
বুধ একটি শুষ্ক, বাতাসহীন, অত্যাধিক গরম গ্রহ। এর চারপাশে পাতলা স্তরের "বায়ুমন্ডল" বিদ্যমান। এই "বায়ুমন্ডল" সামান্য হিলিয়াম, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন এবং সোডিয়ামের মুক্ত পরমানুর সমন্বয়ে গঠিত যা সৌর বায়ু (Solar Wind) সাথে বুধের ভূ-পৃষ্ঠের সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন হয়। কিন্তু এই মুক্ত পরমানু বুধের অত্যাধিক তাপে উত্তপ্ত হয়ে অল্প সময়েই মহাকাশে হারিয়ে যায় এবং পরক্ষনেই সৌর বায়ুর সঙ্গে ভু-পৃষ্ঠের সংঘর্ষের কারনে আবার মুক্ত পরমানু তৈরী হয়। দিনের বেলা সুর্যের তাপমাত্রা ৪৫০ ডিগ্রি সেঃ পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু রাতের বেলা তা কমে মাইনাস ১৭০ ডিগ্রি সেঃ পর্যন্ত নামতে পারে! এর প্রধান কারন হল এখানে কোন বায়ুমন্ডল নাই।

বুধের তাপমাত্রা অত্যাধিক হওয়ায় সেখানে জল/বরফের অস্তিত্ব থাকার কথা নয়। কিন্তু রাডার অবজারভেশনে বুধের উত্তর মেরুতে জমাট বাঁধা বরফের ছায়া দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা বলেছেন বুধের অক্ষ এর কক্ষপথের সাথে প্রায় সমকোন থাকায় উত্তর মেরুতে সুর্য সর্বদা দিগন্তের মাঝামঝি থাকে এবং এখানকার জ্বালামুখ গুলো এত উঁচু (প্রায় ৪ থেকে ৫ কিঃমিঃ) যে এর অভ্যন্তরে কখনোই সুর্যের আলো পৌঁছায় না এবং এ কারনে উত্তর মেরুর জ্বালামুখের অভ্যন্তরে তাপমাত্রা মাইনাস ১৬১ ডিগ্রি সেঃ বা এর কম হতে পারে। এখানে জমাট বাঁধা কিছু বরফ থাকতেও পারে।

বুধের কিছু চমকপ্রদ তথ্যঃ
১) বুধের বয়স প্রায় পৃথিবীর বয়সের সমান (সাড়ে ৪ বিলিয়ন বছর)।
২) বুধের চৌম্বক্ষেত্র খুবই ক্ষীণ; পৃথিবীর চৌম্বক্ষেত্রের তুলনায় ১% মাত্র।
৩) বুধ ভু-পৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে যদি আপনি সুর্যের দিকে তাকান তাহলে সুর্যকে পৃথিবীতে যত বড় দেখায় তার চেয়ে আড়াইগুন বড় দেখতে পাবেন।
৪) বুধের আকাশ প্রায় সবসময় কালো কারন বুধের প্রকৃত কোন "বায়ুমন্ডল" নাই। এজন্য দিনের বেলায় আকাশের দিকে তাকালে অসংখ্য তারা দেখতে পাবেন!
৫) পৃথিবীতে আপনার ওজন ৭০ কেজি হলে বুধে আপনার ওজন হবে প্রায় ২৩ কেজি (কারন বুধের মাধ্যাকর্ষণ পৃথিবীর প্রায় একতৃতীয়াংশ।
৬) অত্যাধিক গরম আর বাতাস না থাকার কারনে বুধে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভবনা নাই বললেই চলে।
৭) এখন পর্যন্ত বুধের কোন উপগ্রহ পাওয়া যায়নি।

বুধ সৌরজগতের সব থেকে ছোট গ্রহ। বুধ বুদ্ধির কারক গ্রহ। অন্যান্য গ্রহ গুলি বিভিন্ন সমন্বয়ে শুভ অশুভ ফল প্রদান করে থাকে। কিন্তু বুধ একক ভাবে শুভ স্থান গত হলে শুভ ফল প্রদান করে আবার অশুভ স্থানে থাকলে অশুভ ফল প্রদান করে।
জ্যোতিষ শাস্ত্র মতে দেখে নেওয়া যাক বুধের কোন স্থানের কী প্রতিকার -
১) লগ্নে বুধ পীড়িত হলে —
ক) যে কোনও সবুজ বস্তু দূরে রাখুন।
খ) বুধবার দিন মদ, মাংস ডিম ভক্ষণ করবেন না।
গ) যদি ব্যবসা করেন তবে স্থায়ী ব্যবসা করুন।
২) দ্বিতীয় স্থানে বুধ পীড়িত-
ক) প্রতিদিন পাঁচটি তুলসীপাতা সেবন করুন।
খ) নিজের শ্যালিকার সঙ্গে কোনও রকম মন্দ আলোচনা করবেন না।
গ) পায়রা, ছাগল, মুরগি ইত্যাদি ঘরে রেখে পুষবেন না।
৩) তৃতীয় স্থানে অশুভ বুধ -
ক) প্রত্যহ লবণ দিয়ে দাঁত মাজুন।
খ) পাখিদের চাল, গম জাতীয় কিছু খাওয়ান।
গ) শ্বাসকষ্টের রোগীদের ঔষধ দান করুন।
৪) চতুর্থ স্থানে অশুভ বুধ -
ক) সোনা অথবা রুপোর গহনা পড়ুন।
খ) প্রতিদিন কপালে কেশরের তিলক লাগান।
গ) বুধবার দিন বাঁদরকে খাওয়ান।
৫) পঞ্চমে অশুভ বুধ -
ক) সাদা সুতোতে একটি তামার পয়সা দিয়ে গলায় পড়ুন।
খ) বড়দের বস্ত্র ও শিশুদের খেলনা দান করুন।
গ) গরুকে শাক সবজি খাওয়ান।
৬) ষষ্ঠ স্থানে অশুভ বুধ -
ক) একটি রুপোর আংটি কোনও বিবাহিত মহিলাকে উপহার দিন।
খ) কোনও শুভ কাজ করার আগে নিজের কন্যাকে ও বোনকে সঙ্গে নিয়ে যান।
গ) একটি বোতলে গঙ্গাজল ভরে তা কোনও চাষ যোগ্য জমিতে পুঁতে দিন।
৭) সপ্তম স্থানে বুধ অশুভ হলে -
ক) শেয়ারে কোনও ব্যবসা করবেন না।
খ) নারীদের সম্মান করুন।
গ) কখনও ভিখারিকে পয়সা দেবেন না, খাবার কিনে দেবেন।
৮) অষ্টমে অশুভ বুধ -
ক) মাটির পাত্রে মধু দিয়ে তকে মাটিতে পুঁতে দিন।
খ) একটি পাত্রে দুধ বা বৃষ্টির জল ছাদে রেখে দিন।
গ) কোনও মহিলাকে নাকের নথ উপহার দিন।
৯) নবমে বুধ অশুভ হলে -
ক) সবুজ বর্ণকে উপেক্ষা করুন।
খ) ধার্মিক স্থানে মাশরুম দান করুন।
গ) ফকিরের কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবেন না।
১০) দশমে বুধ অশুভ হলে -
ক) মাছ, মাংস, ডিম বর্জন করুন।
খ) ধার্মিক স্থানে চাল ও দুধ দান করুন।
১১) একাদশে বুধ অশুভ হলে -
ক) পান্না ও সবুজ বর্ণ বর্জন করুন।
খ) তামার আংটি পড়ুন।
গ) বিধবা বোন বা পিসিকে বাড়িতে রাখবেন না।
১২) দ্বাদশে বুধ অশুভ হলে -
ক) স্টিলের আংটি অনামিকায় ধারণ করুন।
খ) কেশরের জলে স্নান করুন।
গ) কোনও কাজ করার আগে মাতা-পিতার অনুমতি নিন ও প্রণাম করুন।

(৬) বুধাদিত্য যোগ - রবির সঙ্গে বুধের যোগ হলেই এই যোগ হয়। রবির থেকে বুধের দূরত্ব ১০ ডিগ্রির কম হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। যেহেতু বুধ রবির খুব কাছে থেকেই আবর্তিত হয় তাই এই যোগ খুবই সহজ লভ্য।
ফল - অত্যন্ত বুদ্ধিমান, সম্মানিত ও সুনামের অধিকারী। বুধ এবং রবি একই সঙ্গে অবস্থিত হলেই যে ফল ভাল হবে তা নয়। এই যোগ যথাযথ ফল দেবে যদি রবি ও বুধের বল যথেষ্ট হয়। মনে রাখতে হবে বুধ অগ্নি ও বায়ু রাশিতে সব চেয়ে বেশী নিজেকে প্রকাশ করে। অনেকের মতে এই যোগ বেশী ফলদায়ক হবে যদি বুধ ও রবি মেষ, মিথুন, সিংহ বা কন্যা রাশিতে সংযুক্ত হয়। মেষ রবির তুঙ্গী ক্ষেত্র, মিথুন বুধের স্ব্ক্ষেত্র, সিংহ রবির স্বক্ষেত্র এবং কন্যা বুধের স্বক্ষেত্র ও তুঙ্গীক্ষেত্র। কন্যা যদিও পৃথ্বীরাশি, তবুও বুধের স্বক্ষেত্র ও মূলত্রিকোন বলে এই রাশিতে ভাল ফল দিতে পারে। তবে অধিকাংশই নির্ভর করবে বুধের শক্তির উপর। সেই জন্যই গ্রহের বল নির্ণয় খুব প্রয়োজন। নির্দ্দিষ্ট জন্মকুণ্ডলী বিশ্লেষণের সময় এ সম্বন্ধে আরও আলোকপাত করা যাবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই যোগ মেষ রাশিতে, বঙ্কিমচন্দ্র ও শরৎচন্দ্রের ক্ষেত্রে এই যোগ যথাক্রমে মিথুন ও কন্যা রাশিতে ছিল।



Blog Url:
https://apnc.co.in/blog.php?blog=20180402