• apnbkm.09@gmail.com
  • +91 9233172388
  • Vidyasagar Pally, Rampurhat
  • Mon-Sat 11:00 A.M - 8:00 P.M

Wednesday, May 9th, 2018

Astro Palmist Numerology Center

শনির দৃষ্টি

শনির দৃষ্টি

শনির দৃষ্টি

৯-এ নবগ্রহ। আর নবগ্রহের মধ্যে আমাদের সবচেয়ে সুপরিচিত গ্রহটি হল শনি ওরফে শনৈশ্চর। ‘শনির দৃষ্টি’বা ‘শনির দশা’ কথাটা রাজ্যের যত অশুভ ও অমঙ্গলের সমার্থক শব্দ; এমনই শনির কুখ্যাতি! যাঁর দৃষ্টিতে গণেশের মতো জাঁদরেল দেবতার মুন্ডু উড়ে যেতে পারে, তাঁর কাছে মানুষ তো কোন ছাড়! আর তাই স্বর্গপাড়ার এই মস্তান-দেবতাটিকে তুষ্ট করতে ভারতের পথে-ঘাটে-ফুটপাথে কিংবা প্রতিষ্ঠিত মন্দিরে মন্দিরে প্রতি শনিবার বসে বারোয়ারি শনিপুজোর আসর; গ্রহবিপ্রেরা এই ‘মারণ’ দৃষ্টির কোপ থেকে মানুষকে বাঁচাতে দেন হরেক রকমের গ্রহশান্তির বিধান।


কিন্তু এই ভয়ংকর দেবতাটি সম্পর্কে আমরা জানি কতটুকুই বা?
আসুন পুরাণের তালপাতার পুথি খুলে জেনে নিই আমাদের অতিপরিচিত শনিদেবকে।
শনি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা যতই ভয়ভীতিমিশ্রিত হোক না কেন, মৎস্য পুরাণ কিন্তু শনিকে লোকহিতকর গ্রহের তালিকাতেই ফেলেছে। মৎস্য ও সৌর পুরাণের মতে, শনি বিবস্বান (সূর্য) ও ছায়ার পুত্র। আবার অগ্নি পুরাণের মতে, বিবস্বানের পত্নীর সংজ্ঞার গর্ভে শনির জন্ম। এদিকে মার্কণ্ডেয়, বায়ু, ব্রহ্মাণ্ড, বিষ্ণু ও কূর্ম পুরাণ মতে, শনি বা শনৈশ্চর অষ্টরুদ্রের প্রথম রুদ্রের পুত্র। তাঁর মায়ের নাম সুবর্চলা।
স্কন্দ পুরাণের আবন্ত্য খণ্ডে আছে, শনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন শিপ্রা ও ক্ষাতা নদীর সংযোগস্থলে। উক্ত পুরাণেই শনির জন্ম নিয়ে একটি চিত্তাকর্ষক কাহিনির অবতারণা করা হয়েছে: শনি জন্মগ্রহণ করেই ত্রিলোক আক্রমণ করে বসলেন এবং রোহিণীর পথ ভেদ করলেন। সারা ব্রহ্মাণ্ড শঙ্কিত হয়ে উঠল। ইন্দ্র প্রতিকার চাইতে ছুটলেন ব্রহ্মার কাছে। ব্রহ্মা সূর্যের কাছে গিয়ে শনিকে সংযত করতে বললেন। কিন্তু ততক্ষণে শনির দৃষ্টিপাতে সূর্যেরই পা-দুটি পুড়ে গিয়েছে। তিনি কিছুই করতে পারলেন না। তিনি ব্রহ্মাকেই উলটে শনিকে সংযত করার অনুরোধ করলেন। ব্রহ্মা গেলেন বিষ্ণুর কাছে। বিষ্ণুও নিজে কিছু করতে পারবেন না ভেবে ব্রহ্মাকে নিয়ে চললেন শিবের কাছে। শিব শনিকে ডেকে পাঠালেন। শনি বাধ্য ছেলের মতো মাথাটি নিচু করে এলেন শিবের কাছে। শিব শনিকে অত্যাচার করতে বারণ করলেন। তখন শনি শিবকে তাঁর জন্য খাদ্য, পানীয় ও বাসস্থানের নির্দেশ করতে বললেন। তখন শিবই ঠিক করে দিলেন—শনি মেষ ইত্যাদি রাশিতে তিরিশ মাস করে থেকে মানুষের পিছনে লাগবেন এবং এই করেই তাঁর হাড় জুড়াবে। অষ্টম, চতুর্থ, দ্বিতীয়, দ্বাদশ ও জন্মরাশিতে অবস্থান হলে তিনি সর্বদাই বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন হবেন। কিন্তু তৃতীয়, ষষ্ঠ বা একাদশ স্থানে এলে তিনি মানুষের ভাল করবেন এবং তখন মানুষও তাঁকে পূজা করবে। পঞ্চম বা নবম স্থানে এলে তিনি উদাসীন থাকবেন। এও ঠিক হল, অন্যান্য গ্রহদের তুলনায় তিনি বেশি পূজা ও শ্রেষ্ঠতম স্থান পাবেন। পৃথিবীতে স্থির গতির জন্য তাঁর নাম হবে স্থাবর। আর রাশিতে মন্দ গতির জন্য তাঁর নাম হবে শনৈশ্চর। তাঁর গায়ের রং হবে হাতি বা মহাদেবের গলার রঙের মতো। তাঁর চোখ থাকবে নিচের দিকে। সন্তুষ্ট হলে তিনি লোককে দেবেন রাজ্য, অসন্তুষ্ট হলে লোকের প্রাণ নেবেন। শনির দৃষ্টি যার দিকেই পড়বে, তিনি দেবতাই হোন, বা দৈত্য, মানব, উপদেবতাই হোন, পুড়ে মরতে হবেই হবে। এই কথা বলে শিব শনিকে মহাকালবনে বাস করতে বললেন।

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের গণেশের জন্মকাহিনির সঙ্গে শনির যোগের কথা অনেকেই জানেন। তবু সেটার উল্লেখ না করলে এই রচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। উক্ত পুরাণ মতে, শনি আদৌ কুদৃষ্টি নিয়ে জন্মাননি; বরং স্ত্রীর অভিশাপই তাঁর কুদৃষ্টির কারণ। একদিন শনি ধ্যান করছিলেন, এমন সময় তাঁর স্ত্রী সুন্দর বেশভূষা করে এসে তাঁর কাছে সঙ্গম প্রার্থনা করলেন। ধ্যানমগ্ন শনি কিন্তু স্ত্রীর দিকে ফিরেও চাইলেন না। অতৃপ্তকাম শনিপত্নী তখন শনিকে অভিশাপ দিলেন, “আমার দিকে ফিরেও চাইলে না তুমি! যাও, অভিশাপ দিলুম, এরপর থেকে যার দিকেই চাইবে, সে-ই ভষ্ম হয়ে যাবে।” এরপর ঘটনাচক্রে গণেশের জন্ম হল। সকল দেবদেবীর সঙ্গে শনিও গেলেন গণেশকে দেখতে। কিন্তু স্ত্রীর অভিশাপের কথা স্মরণ করে তিনি গণেশের মুখের দিকে তাকালেন না। পার্বতী শনির এই অদ্ভুত আচরণের কারণ জিজ্ঞাসা করলে শনি অভিশাপের বৃত্তান্ত খুলে বলেন। কিন্তু পার্বতী সেকথা বিশ্বাস করলেন না। তিনি শনিকে পীড়াপীড়ি করতে শুরু করলেন। বারংবার অনুরোধের পর শনি শুধু আড়চোখে একবার গণেশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তাতেই গণেশের মুণ্ড দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

কৃত্তিবাসী রামায়ণে রাজা দশরথের সঙ্গে শনির সাক্ষাৎকারের একটি বর্ণনা আছে। কৃত্তিবাস এই কাহিনিটি আহরণ করেছেন স্কন্দ পুরাণের নাগর ও প্রভাস খণ্ড থেকে—তবে একটু অন্যভাবে। উক্ত পুরাণের মতে, অযোধ্যার জ্যোতিষীগণ দশরথকে সাবধান করে বলেছিলেন, শনিগ্রহ শীঘ্রই রোহিণী ভেদ করবেন। আর তার ফলে বারো বছর ধরে রাজ্যে ভীষণ অনাবৃষ্টি হবে। এই কথা শুনে ইন্দ্রের দেওয়া দিব্য রথে চড়ে দশরথ তৎক্ষণাৎ শনির পিছন ছুটলেন। সূর্য ও চন্দ্রের পথ অতিক্রম করে একেবারে নক্ষত্রমণ্ডলে গিয়ে শনির সামনে উপস্থিত হয়ে রাজা বললেন, “তুমি রোহিণীর পথ পরিত্যাগ কর। না করলে, আমি তোমাকে বধ করব।” শনি দশরথের এই রকম সাহস দেখে অবাক হয়ে গেলেন। তিনি রাজার পরিচয় জানতে চাইলে দশরথ আত্মপরিচয় দিলেন। শুনে শনি বললেন, “আমি তোমার সাহস দেখে অত্যন্ত প্রীত হয়েছি। আমি যার দিকে তাকাই, সেই ভষ্ম হয়ে যায়। তবু তুমি প্রজাহিতের জন্য নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে আমার কাছে এসেছো, এতে আমি আরও বেশি খুশি হয়েছি। যাও, আমি কথা দিলাম, রোহিণীর পথ আমি আর কোনোদিনও ভেদ করব না।” কৃত্তিবাসী রামায়ণে আছে, অনাবৃষ্টি শুরু হওয়ার পর দশরথ শনির কাছে গিয়েছিলেন।
এবার চলে যাই দেশান্তরের পুরাণে। আমরা হিন্দুরা যে গ্রহটিকে শনি নামে চিহ্নিত করেছি, পাশ্চাত্য জগতে সেই গ্রহটির নাম স্যাটার্ন (Saturn)। রোমান দেবতা। তবে রোমান পুরাণের অন্যান্য দেবতাদের মতো ইনিও গ্রিক পুরাণ থেকে আমদানিকৃত। গ্রিক পুরাণে স্যাটার্নের নাম ক্রোনাস। স্যাটার্নের নাম অনুসারে স্যাটারডে, যেমন শনির নামে শনিবার। এছাড়া শনি ও ক্রোনাস/স্যাটার্নের মধ্যে মিল অল্পই। কালিকা পুরাণে শনির ধ্যানমন্ত্রে আছে --

ইন্দ্রনীলনিভঃ শূলী বরদো গৃধ্রবাহনঃ।
পাশবাণাসনধরো ধ্যাতব্যোঽর্কসুতঃ।।

অর্থাৎ, “নীলকান্তমণির মতো গাত্রবর্ণবিশিষ্ট; শূল, বরমুদ্রা, পাশ ও ধনুর্বাণধারী; শকুনিবাহন সূর্যপুত্র শনিকে ধ্যান করি।” মহানির্বাণ তন্ত্রে আরও এক ধাপ উঠে বলা হয়েছে, শনি হলেন কানা ও খোঁড়া। বলাবাহুল্য, এই চেহারার সঙ্গে ক্রোনাস/স্যাটার্নের চেহারার মিল আদৌ নেই। তাঁর হাতে থাকে কাস্তে। গ্রিক পুরাণে ক্রোনাস হলেন দেবরাজ জিউসের পিতা। তিনি ব্রহ্মাণ্ডপিতা ইউরেনাসের পুত্র। পিতাকে সিংহাসন থেকে উৎখাত করে তিনি ব্রহ্মাণ্ডের অধীশ্বর হন। অত্যন্ত ক্ষমতালোভী ছিলেন। তাঁর ছেলেরা যাতে তাঁকে অনুসরণ করে সিংহাসনের দখল না নিতে পারে, সেজন্য তিনি নিজের ছেলেমেয়েদেরই ভক্ষণ করতেন। শেষে পুত্র জিউসের হাতে তাঁকে ক্ষমতা হারাতে হয় এবং তিনি কৃষিকর্মের দেবতা হয়ে থেকে যান। রোমান স্যাটার্নও কৃষিকাজ, মুক্তি ও সময়ের দেবতা। সেই হিসেবেও দেখা যায়, শনির মতো লোকপীড়নকারী চরিত্র এঁদের নয়।

শেষ পাতে, জ্যোতিষ থেকে চলে আসি জ্যোতির্বিজ্ঞানে। হিন্দুপুরাণের শনি যতই কুৎসিত এবং ক্ল্যাসিক্যাল পুরাণের স্যাটার্ন যতই নৃশংস হোন না কেন, আমাদের সৌরজগতের ষষ্ঠ গ্রহটি কিন্তু রূপে গুণে অসামান্য। তার কারণ, অবশ্যই এই গ্রহকে ঘিরে থাকা চাকতিগুলি; জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে আমরা বলি ‘শনির বলয়’। তুষারকণা, খুচরো পাথর আর ধূলিকণায় সৃষ্ট মোট নয়টি পূর্ণ ও তিনটি অর্ধবলয় শনিকে সর্বদা ঘিরে থাকে। শনি দৈত্যাকার গ্রহ; এর গড় ব্যাস পৃথিবীর তুলনায় নয় গুণ বড়ো। এর অভ্যন্তরভাগে আছে লোহা, নিকেল এবং সিলিকন ও অক্সিজেন মিশ্রিত পাথর। তার উপর যথাক্রমে একটি গভীর ধাতব হাইড্রোজেন স্তর, একটি তরল হাইড্রোজেন ও তরল হিলিয়াম স্তর এবং সবশেষে বাইরে একটি গ্যাসীয় স্তরের আস্তরণ। আমাদের শনিদেবের গায়ের রং নীলকান্তমণির মতো (শ্রদ্ধেয় হংসনারায়ণ ভট্টাচার্যের মতে এই রং বিষ্ণুর থেকে ধার করা)। শনি গ্রহের রং কিন্তু হালকা হলুদ। এর কারণ শনির বায়ুমণ্ডলের উচ্চবর্তী স্তরে অবস্থিত অ্যামোনিয়া ক্রিস্টাল। শনির ধাতব হাইড্রোজেন স্তরে প্রবাহিত হয় এক ধরনের বিদ্যুত প্রবাহ। এই বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকেই শনির গ্রহীয় চৌম্বক ক্ষেত্রের উদ্ভব ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত শনির বাষট্টিটি চাঁদ আবিষ্কৃত হয়েছে এবং তার মধ্যে তিপ্পান্নটির সরকারিভাবে নামকরণ করা হয়েছে। অবশ্য এগুলি ছাড়াও শনির শতাধিক উপচাঁদ বা চন্দ্রাণু (Moonlets) আছে। সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ টাইটান শনির বৃহত্তম উপগ্রহ। এটি আকারে মঙ্গলের চেয়েও বড়ো এবং এটিই সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যার একটি সমৃদ্ধ বায়ুমণ্ডল আছে।
kush mukherjee
rampurhat chaklamath birbhum
whatsapp no 9233172388
Page link:@astropalmist1
Website:www.apnc.co.in



Blog Url:
https://apnc.co.in/blog.php?blog=20180509094456