সুপ্রভাত
মা চামুণ্ডা
..................
চামুণ্ডা দেবীর আবির্ভাব কোনো দেবতার শরীর থেকে হয় নি। ইঁনি কৌশিকী দেবীর ভ্রকুটি কুটিল ললাট দেশ থেকে উৎপন্ন হয়ে এসেছেন। চামুণ্ডা দেবী আর দেবী কালীর অনেক সাদৃশ্য দেখা যায়, কিছু কিছু চণ্ডীর ব্যাখাকারদের মতে এই চামুণ্ডা দেবী হলেন তন্ত্রের দেবী কালিকা। যাই হোক এই যুক্তির পেছনে অনেক বিপক্ষ ও পক্ষের যুক্তি আছে। ধূম্রলোচন নামক অসুর , দেবীর হুঙ্কারে ভস্ম হওয়ার পর শুম্ভ ও নিশুম্ভ তখন চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুরকে যুদ্ধে প্রেরণ করে। শুম্ভের আদেশে চণ্ড ও মুণ্ড প্রমুখ দৈত্যগন হস্তী অশ্ব রথ পদাতিক নিয়ে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলো। দেবীকে দেখা মাত্রই অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে অসুরেরা ধাবমান হল। শ্রীশ্রীচণ্ডীতে লেখা আছে-
ততঃ কোপঞ্চকারোচ্চৈরম্বিকা তানরীন্ প্রতি ।
কোপেন চাস্যা বদনং মসীবর্নমভূৎ তদা ।।
ভ্রকুটিকুটিলাৎ তস্যা ললাটফলকাদ্দ্রুতম্ ।
কালী করালবদনা বিনিস্ক্রান্তসিপাশিনী ।।
বিচিত্রখট্বাঙ্গধরা নরমালাবিভূষণা ।
দ্বীপিচর্মপরীধানা শুস্কমাংসাতিভৈরবা ।।
অতিবিস্তারবদনা জিহ্বাললনভীষণা ।
নিমগ্নারক্তনয়না নাদাপূরিতদিঙ্মুখা ।।
( শ্রীশ্রীচণ্ডী... সপ্তম অধ্যায়... শ্লোক- ৫- ৮ )
অর্থাৎ- তখন অম্বিকা সেই শত্রুগণের প্রতি অত্যন্ত ক্রুদ্ধা হইলেন এবং ভীষণ ক্রোধে তাঁহার মুখমণ্ডল কৃষ্ণবর্ণ হইল। তখন দেবীর ভ্রূকুটি কুটিল ললাটদেশ হতে শীঘ্র খড়্গধরা ও পাশহস্তা ভীষনবদনা কালী বিনিঃসৃতা হইলেন। অম্বিকার ললাটোদ্ভুতা সেই চামুণ্ডা দেবী বিচিত্র নরকঙ্কালধারিণী, নৃমুণ্ডমালিনী, ব্যাঘ্র- চর্ম পরিহিতা , অস্থিচর্মমাত্রদেহা , অতিভীষণা, বিশাল- বদনা, লোলজিহ্বায় ভয়প্রদা,কোটরগত আরক্ত চক্ষুবিশিষ্টা এবং বিকট শব্দে চারপাশ পূর্ণকারিণী।
এই দেবীর যুদ্ধকৌশলও শ্রীশ্রীচণ্ডীতে লেখা আছে। এই রকম যুদ্ধ বা দেবীর এমন উগ্র প্রকাশ এর আগে দেখা যায় নি। এমনকি মহিষাসুর বধের সময়ও দেবী এমন উগ্রমূর্তি ধারণ করেন নি। এই দেবী অসুরসেনাদের মধ্যে প্রবেশ করে অসুরদের বধ ও ভক্ষণ করতে লাগলেন। এমনকি অশ্ব- সারথি- সহিত অসুরদের রথ শুদ্ধ মুখে নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেললেন। অসুরেরাও এমন যুদ্ধ আগে দেখেনি। ত্রিলোক এমনকি দেবতারাও দেবীর এই স্বরূপে আশ্চর্যচকিত হয়েছিলেন। শুধু এইটুকুই নয়, অসুরদের কাওকে কেশ এবং গ্রীবা ধরে বধ করলেন। কতেক অসুর দেবীর চরণে দলিত হল। এমনকি অসুরেরা যে সকল অস্ত্র নিক্ষেপ করলো- দেবী সেই অস্ত্রগুলিও চিবিয়ে ভক্ষণ করলেন। এ যেনো সর্বগ্রাসী মূর্তি। কোনো অসুরকে দেবী খড়্গ দিয়ে বধ, কাহাকে খট্বাঙ্গের প্রহারে হত কাওকে চর্বণ করে বধ করলেন। দেবীর ভীম বিক্রমে দানবিক আঘাত ক্রমশ শক্তিহীন হলে চণ্ডমুণ্ডের সাথে দেবী কালীর যুদ্ধ আরম্ভ হল। দেবী কালী ‘হুং’ শব্দ করে চণ্ডের কেশ ধরে খড়্গ দিয়ে শিরোচ্ছেদ করলেন। মুণ্ড এরপর যুদ্ধে প্রবৃত্ত হলে দেবী খড়্গ দিয়ে তারও শিরোচ্ছেদ করলেন। রক্তারক্তি মাখা দেবীর সমগ্র শরীর, খড়্গও রক্তে রাঙা। সেই অবস্থায় দেবী চামুণ্ডা হাতে চণ্ড- মুণ্ডের শির নিয়ে দেবী কৌশিকীকে উপহার দিলেন। দেবী কৌশিকী প্রীতা হয়ে বললেন-
যস্মাচ্চণ্ডচ্চ মুণ্ডচ্চ গৃহীত্বা ত্বমুপাগতা।
চামুণ্ডেতি ততো লোকে খ্যাতা দেবি ভবিষ্যসি ।
( শ্রীশ্রীচণ্ডী... সপ্তম অধ্যায়... শ্লোক- ২৭ )
অর্থাৎ- দেবি, তুমি চণ্ড ও মুণ্ডের মস্তকদ্বয় আমার নিকট আনিয়াছ বলিয়া ধরিত্রীতে তুমি চামুণ্ডা নামে বিখ্যাত হইবে।
এখানেই দেবীর লীলা সমাপন হয় না । এই দেবী রক্তবীজের রক্ত পান করেছিলেন। রক্তবীজ হল লোভের প্রতীক। লোভ কখনো মেটে না- একটি পূর্ণ হলে দশটা লোভ জেগে ওঠে। কিন্তু মা থাকতে ভাবনা কি? মা যে এই আসুরিক রিপু গুলিকে ধ্বংস করেন জ্ঞানখড়্গে। রক্তবীজের বর ছিলো তার যত ফোঁটা রক্ত ভূমিতে পড়বে তত রক্তবীজ উৎপন্ন হবে। অষ্টমাতৃকাদের সাথে যুদ্ধের সময় রক্তবীজ আহত হলে তার দেহ থেকে রুধিরবিন্দু দিয়ে অনেক রক্তবীজ উৎপন্ন হয়েছিলো। চামুণ্ডা দেবী সেই সকল রক্তবীজকে বধ করে সমস্ত রক্তই পান করেছিলেন। রক্তবিন্দু মাটিতে না পড়ার জন্য আর নতুন করে রক্তবীজ উৎপন্ন হল না। মূল রক্তবীজ বধের সময় এল। দেবী অম্বিকা বললেন- “চামুণ্ডা। শীঘ্র তোমার শরীর বৃদ্ধি করো। রক্তবীজের সমস্ত রক্ত পান কর। উহার বিন্দুজাত সমস্ত অসুরদের রক্তপান করো। তা হইলেই নিহত হইবে।” এ এক ভয়ানক দৃশ্য। অম্বিকাদেবী রক্তবীজকে শূল দিয়ে আঘাত করলেন। চামুণ্ডাদেবী বিশাল জিহ্বায় রক্তবীজের সমস্ত রক্ত পান করলেন। রক্তবীজ ও তার বিন্দুজাত অসুরেরা হত হল। দেবতারা খুশী হয়ে দেবীর স্তবস্তুতি করলেন। এই সময় দেখা যায় অনান্য মানে ব্রহ্মাণী আদি মাতৃকারাও অসুর রক্ত পান করেছিলেন। এরপর একটি আখ্যান আছে। দেবী কালী ক্রুদ্ধ হলে ত্রিলোক ধ্বংস হবার উপক্রম হয়। তখন মহাদেব বুক পেতে দিলে মা কালী শিবের বুকে চরণ রাখেন। স্বামীর ওপর চরণ রাখায় দেবী খুব লজ্জিত হয়ে জিহ্বা বের করেন। তখন দেবী শান্ত হন। লোকশ্রুতি যে মা কালীর হাতে যে মুণ্ড থাকে তা আসলে রক্তবীজের মুণ্ড। সেই মুণ্ডের রক্ত বিন্দু বিন্দু ধারায় পান করে এক শৃগাল বা শিবা। অবশ্য শ্রীশ্রীচণ্ডীতে এমন কিছুর উল্লেখ নেই।
অগ্নিপুরাণে আট প্রকার চামুণ্ডার উল্লেখ আছে। যথা- রুদ্রচর্চিকা, রুদ্রচামুণ্ডা, মহালক্ষ্মী, সিদ্ধচামুণ্ডা, সিদ্ধযোগেশ্বরী, রূপবিদ্যা, ক্ষমা ও দন্তুরা । দুর্গা পূজার সময় সন্ধিপূজায় এই দেবী চামুণ্ডার পূজা হয়। কালিকাপুরাণে এই দেবী চামুণ্ডার একটি অন্যরূপ দেখা যায়। নীল পদ্মের মতো শ্যামা , চতুর্ভুজা, ডানদিকের দুই হাতে খটাঙ্গ, চন্দ্রহাস খড়্গ- বামদিকের দুই হাতে পাশ ও ঢাল ধারণ করে আছেন। গলায় মুণ্ডমালা, পরনে বাঘছাল,শীর্ণ ও দীর্ঘকায়া, বড় বড় দাঁত বাইরে , জিহ্বা লকলক করছে । তাঁর ত্রিনয়ন লাল, মুখ ও কর্ণ বড়। দেবী একটি কবন্ধের উপর বিরাজ করছেন। দেবীভাগবতপুরাণেও চামুণ্ডা দেবীর কথা আছে।
ব্রহ্মর্ষি সত্যদেব “সাধন সমর” গ্রন্থে লেখেছেন- “কালী- কালশক্তি । যে চৈতন্যময়ী মহাশক্তি কালবোধে প্রবুদ্ধা হন, তাঁহাকেই কালীশক্তি বলে। কালাতীত সত্তায় প্রবেশ করিতে হইলে , সকল সাধককেই এই কালীমূর্তির ভিতর দিয়া প্রবেশ করিতে হয় । কালী মা আমার ভীষণা সংহারিণী মহতী শক্তি । ”
এই হল মা চামুণ্ডার কথা। মা চামুণ্ডার শ্রীচরণে প্রনাম জানিয়ে বলি-
দংষ্ট্রাকরালবদনে শিরোমালাবিভূষণে ।
চামুণ্ডে মুণ্ডমথনে নারায়ণি নমোহস্তু তে ।।
এই হল সংক্ষিপ্ত অষ্টমাতৃকার কথা। দেবীভাগবত পুরাণে এছাড়াও তিনটি শক্তির নাম আছে। এঁনারা হলেন কুবের দেবের শক্তি কৌবেরী, বরুণের শক্তি বারুনী আর যমের শক্তি যামিনী। এঁনারাও যুদ্ধে এসেছিলেন। তবে শ্রীশ্রীচণ্ডী তথা মার্কণ্ড পুরাণে এঁনাদের উল্লেখ নেই। জয় মা।
ACHARYA KUSH MUKHERJEE
RAMPURHAT CHAKLAMATH BIRBHUM (W.B)
PIN NO 731224
GOLD MEDALIST
WHATSAPP NO 9233172388
CONTACT NO 7001608953
ONLINE PORISEVA DEWA HOI rs 1000/=
MY PAGE NAME IS ASTRO-PALMIST-NEUMEROLOGY CENTER
PLEASE LIKE&SARE
Contact with me :www.apnc.co.in
https://m.facebook.com/Astro-Palmist-Neumerology-Center-1569956439973629/?ref=bookmarks