• apnbkm.09@gmail.com
  • +91 9233172388
  • Vidyasagar Pally, Rampurhat
  • Mon-Sat 11:00 A.M - 8:00 P.M

Saturday, November 14th, 2020

Astro Palmist Numerology Center

কালীপূজা ২০২০

কালীপূজা ২০২০

শুভ শনিবার(১৪/১১/২০২০)

আজ দ্বীপান্বিতা অমাবস্যা(কালীপূজা),সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।সকলের কাছে অনুরোধ প্রতিবেদন টি পড়বেন ও মন্তব্য করবেন।

আমবস্যা তিথি শুরু – ০২:১৭ PM , ১৪ নভেম্বর ২০২০,শনিবার
আমবস্যা তিথি সমাপ্ত – ১০.৩৬ AM , ১৫ নভেম্বর ২০২০ রবিবার

তন্ত্রশাস্ত্রের মতে, কালী দশমহাবিদ্যা নামে পরিচিত তন্ত্রমতে পূজিত প্রধান দশ জন দেবীর মধ্যে প্রথম দেবী। শাক্তরা কালীকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আদি কারণ মনে করে। বাঙালি হিন্দু সমাজে দেবী কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়।
'ওঁ খড়্গং চক্রগদেষুচাপপরিঘান শূলং ভুসূণ্ডিং শিরঃ| শঙ্খং সন্দধতীং করৈস্ত্রিনয়নাং সর্বাঙ্গভূষাবৃতাম্ || নীলাশ্মদ্যুতিমাস্যপাদদশকাং সেবে মহাকালিকাম্ | যামস্তৌচ্ছয়িতে হরৌ কমলজো হন্তুং মধুং কৈটভম্ ||' ----মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর প্রথম চরিত্র শ্রী শ্রী মহাকালীর ধ্যানমন্ত্রে পাওয়া যায়।

কালী একজন হিন্দু দেবী। যাঁর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি। প্রধানত শাক্ত ধর্মাবলম্বীরা কালীর পূজা করেন।
বাঙালি হিন্দু সমাজে দেবী কালীর মাতৃরূপের পূজা বিশেষ জনপ্রিয়।
পুরাণ ও তন্ত্র গ্রন্থগুলিতে কালীর বিভিন্ন রূপের বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে সাধারণভাবে তাঁর মূর্তিতে চারটি হাতে খড়্গ, অসুরের ছিন্নমুণ্ড, বর ও অভয়মুদ্রা; গলায় মানুষের মুণ্ড দিয়ে গাঁথা মালা; বিরাট জিভ, কালো গায়ের রং, এলোকেশ দেখা যায় এবং তাঁকে তাঁর স্বামী শিবের বুকের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।

ব্রহ্মযামল মতে, কালী বঙ্গদেশের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। কালীর বিভিন্ন রূপভেদ আছে। যেমন – দক্ষিণাকালী, শ্মশানকালী, ভদ্রকালী, রক্ষাকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, চামুণ্ডা ইত্যাদি। আবার বিভিন্ন মন্দিরে "ব্রহ্মময়ী", "ভবতারিণী", "আনন্দময়ী", "করুণাময়ী" ইত্যাদি নামে কালীপ্রতিমা প্রতিষ্ঠা ও পূজা করা হয়। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জাঁকজমক সহকারে পালিত হয়। এছাড়া মাঘ মাসে রটন্তী কালীপূজা ও জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণী কালীপূজাও বিশেষ জনপ্রিয়। অনেক জায়গায় প্রতি অমাবস্যা এবং প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবারে কালীপূজা হয়ে থাকে।

পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় অনেক কালীমন্দির আছে। তাই ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে কালীকে "কলকাত্তাওয়ালি" (কলকাতানিবাসী) বলা হয়। কলকাতার সবচেয়ে বিখ্যাত কালীমন্দিরটি হল কালীঘাট মন্দির। এটি একটি সতীপীঠ। এছাড়া দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ি, আদ্যাপীঠ, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ি ইত্যাদি কলকাতা অঞ্চলের বিখ্যাত কয়েকটি কালী মন্দির। এছাড়া লালনার সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ময়দা কালীবাড়ি, উত্তর চব্বিশ পরগনার হালিশহরের রামপ্রসাদী কালী মন্দির ইত্যাদি,তারাপীঠ এর মাতারা, পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কয়েকটি কালীমন্দির। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের অধুনা ধ্বংসপ্রাপ্ত রমনা কালীমন্দির ছিল খুবই প্রাচীন একটি কালীমন্দির। ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লির নতুন দিল্লি কালীবাড়ি একটি ঐতিহ্যপূর্ণ কালীমন্দির।

‘কালী’ শব্দটি ‘কাল’ শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ রূপ, যার অর্থ “কৃষ্ণ, ঘোর বর্ণ” (পাণিনি ৪।১।৪২)। মহাভারত অনুসারে, এটি দুর্গার একটি রূপ (মহাভারত, ৪।১৯৫)। আবার হরিবংশ গ্রন্থে কালী একটি দানবীর নাম (হরিবংশ, ১১৫৫২)।

‘কাল’, যার অর্থ ‘নির্ধারিত সময়’, তা প্রসঙ্গক্রমে ‘মৃত্যু’ অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এর সমোচ্চারিত শব্দ ‘কালো’র সঙ্গে এর কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। কিন্তু লৌকিক ব্যুৎপত্তির দৌলতে এরা পরস্পর সংযুক্ত হয়ে গেছে। মহাভারত-এ এক দেবীর উল্লেখ আছে যিনি হত যোদ্ধা ও পশুদের আত্মাকে বহন করেন। তাঁর নাম কালরাত্রি বা কালী। সংস্কৃত সাহিত্যের বিশিষ্ট গবেষক টমাস কবার্নের মতে, এই শব্দটি নাম হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে আবার ‘কৃষ্ণবর্ণা’ বোঝাতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।

রূপভেদ

তন্ত্র ও পুরাণে দেবী কালীর একাধিক রূপভেদের কথা পাওয়া যায়। তোড়ল তন্ত্র মতে কালী অষ্টধা বা অষ্টবিধ। যথা – দক্ষিণাকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী, মহাকালী, ভদ্রকালী, চামুণ্ডাকালী, শ্মশানকালী ও শ্রীকালী। মহাকাল সংহিতা অনুসারে আবার কালী নববিধা। এই তালিকা থেকেই পাওয়া যায় কালকালী, কামকলাকালী, ধনদাকালী ও চণ্ডিকাকালীর নাম।

দক্ষিণাকালী

দক্ষিণাকালীর কালীর সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ মূর্তি। ইনি প্রচলিত ভাষায় শ্যামাকালী নামে আখ্যাতা। দক্ষিণাকালী করালবদনা, ঘোরা, মুক্তকেশী, চতুর্ভূজা এবং মুণ্ডমালাবিভূষিতা। তাঁর বামকরযুগলে সদ্যছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ; দক্ষিণকরযুলে বর ও অভয় মুদ্রা। তাঁর গাত্রবর্ণ মহামেঘের ন্যায়; তিনি দিগম্বরী। তাঁর গলায় মুণ্ডমালার হার; কর্ণে দুই ভয়ানক শবরূপী কর্ণাবতংস; কটিদেশে নরহস্তের কটিবাস। তাঁর দন্ত ভয়ানক; তাঁর স্তনযুগল উন্নত; তিনি ত্রিনয়নী এবং মহাদেব শিবের বুকে দণ্ডায়মান। তাঁর দক্ষিণপদ শিবের বক্ষে স্থাপিত। তিনি মহাভীমা, হাস্যযুক্তা ও মুহুর্মুহু রক্তপানকারিনী।

তাত্ত্বিকের তাঁর নামের যে ব্যাখ্যা দেন তা নিম্নরূপ: দক্ষিণদিকের অধিপতি যম যে কালীর ভয়ে পলায়ন করেন, তাঁর নাম দক্ষিণাকালী। তাঁর পূজা করলে ত্রিবর্ণা তো বটেই সর্বোপরি সর্বশ্রেষ্ঠ ফলও দক্ষিণাস্বরূপ পাওয়া যায়।

সিদ্ধকালী

সিদ্ধকালী কালীর একটি অখ্যাত রূপ। গৃহস্থের বাড়িতে সিদ্ধকালীর পূজা হয় না; তিনি মূলত সিদ্ধ সাধকদের ধ্যান আরাধ্যা। কালীতন্ত্র-এ তাঁকে দ্বিভূজা রূপে কল্পনা করা হয়েছে। অন্যত্র তিনি ব্রহ্মরূপা ভুবনেশ্বরী। তাঁর মূর্তিটি নিম্নরূপ: দক্ষিণহস্তে ধৃত খড়্গের আঘাতে চন্দ্রমণ্ডল থেকে নিঃসৃত অমৃত রসে প্লাবিত হয়ে বামহস্তে ধৃত একটি কপালপাত্রে সেই অমৃত ধারণ করে পরমানন্দে পানরতা। তিনি সালংকারা। তাঁর বামপদ শিবের বুকে ও বামপদ শিবের উরুদ্বয়ের মধ্যস্থলে সংস্থাপিত।

গুহ্যকালী

গুহ্যকালী বা আকালীর রূপ গৃহস্থের কাছে অপ্রকাশ্য। তিনি সাধকদের আরাধ্য। তাঁর রূপকল্প ভয়ংকর: গুহ্যকালীর গাত্রবর্ণ গাঢ় মেঘের ন্যায়; তিনি লোলজিহ্বা ও দ্বিভূজা; গলায় পঞ্চাশটি নরমুণ্ডের মালা; কটিতে ক্ষুদ্র কৃষ্ণবস্ত্র; স্কন্ধে নাগযজ্ঞোপবীত; মস্তকে জটা ও অর্ধচন্দ্র; কর্ণে শবদেহরূপী অলংকার; হাস্যযুক্তা, চতুর্দিকে নাগফণা দ্বারা বেষ্টিতা ও নাগাসনে উপবিষ্টা; বামকঙ্কণে তক্ষক সর্পরাজ ও দক্ষিণকঙ্কণে অনন্ত নাগরাজ; বামে বৎসরূপী শিব; তিনি নবরত্নভূষিতা; নারদাদিঋষিগণ শিবমোহিনী গুহ্যকালীর সেবা করেন; তিনি অট্টহাস্যকারিণী, মহাভীমা ও সাধকের অভিষ্ট ফলপ্রদায়িনী। গুহ্যকালী নিয়মিত শবমাংস ভক্ষণে অভ্যস্তা।

মুর্শিদাবাদ-বীরভূম সীমান্তবর্তী আকালীপুর গ্রামে মহারাজা নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত গুহ্যকালীর মন্দিরের কথা জানা যায়। মহাকাল সংহিতা মতে, নববিধা কালীর মধ্যে গুহ্যকালীই সর্বপ্রধানা। তাঁর মন্ত্র বহু – প্রায় আঠারো প্রকারের

মহাকালী

তন্ত্রসার গ্রন্থমতে, মহাকালী পঞ্চবক্ত্রা ও পঞ্চদশনয়না। তবে শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে তাঁকে আদ্যাশক্তি, দশবক্ত্রা, দশভূজা, দশপাদা ও ত্রিংশল্লোচনা রূপে কল্পনা করা হয়েছে। তাঁর দশ হাতে রয়েছে যথাক্রমে খড়্গ,চক্র,গদা,ধনুক,বাণ,পরিঘ,শূল,ভূসুণ্ডি,নরমুণ্ড ও শঙ্খ। ইনিও ভৈরবী; তবে গুহ্যকালীর সঙ্গে এঁর পার্থক্য রয়েছে। ইনি সাধনপর্বে ভক্তকে উৎকট ভীতি প্রদর্শন করলেও অন্তে তাঁকে রূপ, সৌভাগ্য, কান্তি ও শ্রী প্রদান করেন।

ভদ্রকালী

ভদ্রকালী নামের ভদ্র শব্দের অর্থ কল্যাণ এবং কাল শব্দের অর্থ শেষ সময়। যিনি মরণকালে জীবের মঙ্গলবিধান করেন, তিনিই ভদ্রকালী। ভদ্রকালী নামটি অবশ্য শাস্ত্রে দুর্গা ও সরস্বতী দেবীর অপর নাম রূপেও ব্যবহৃত হয়েছে। কালিকাপুরাণ মতে, ভদ্রকালীর গাত্রবর্ণ অতসীপুষ্পের ন্যায়, মাথায় জটাজুট, ললাটে অর্ধচন্দ্র ও গলদেশে কণ্ঠহার। তন্ত্রমতে অবশ্য তিনি মসীর ন্যায় কৃষ্ণবর্ণা, কোটরাক্ষী, সর্বদা ক্ষুধিতা, মুক্তকেশী; তিনি জগৎকে গ্রাস করছেন; তাঁর হাতে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা ও পাশযুগ্ম।

গ্রামবাংলায় অনেক স্থলে ভদ্রকালীর বিগ্রহ নিষ্ঠাসহকারে পূজিত হয়। এই দেবীরও একাধিক মন্ত্র রয়েছে। তবে প্রসিদ্ধ চতুর্দশাক্ষর মন্ত্রটি হল – ‘হৌঁ কালি মহাকালী কিলি কিলি ফট স্বাহা’।

চামুণ্ডাকালী

চামুণ্ডাকালী বা চামুণ্ডা ভক্ত ও সাধকদের কাছে কালীর একটি প্রসিদ্ধ রূপ। দেবীভাগবত পুরাণ ও মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর বর্ণনা অনুযায়ী, চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামক দুই অসুর বধের নিমিত্ত দেবী দুর্গার ভ্রুকুটিকুটিল ললাট থেকে উৎপন্ন হন। তাঁর গাত্রবর্ণ নীল পদ্মের ন্যায়, হস্তে অস্ত্র, দণ্ড ও চন্দ্রহাস; পরিধানে ব্যাঘ্রচর্ম; অস্তিচর্মসার শরীর ও বিকট দাঁত। দুর্গাপূজায় মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে আয়োজিত সন্ধিপূজার সময় দেবী চামুণ্ডার পূজা হয়। পূজক অশুভ শত্রুবিনাশের জন্য শক্তি প্রার্থনা করে তাঁর পূজা করেন। অগ্নিপুরাণ-এ আট প্রকার চামুণ্ডার কথা বলা হয়েছে। তাঁর মন্ত্রও অনেক।

শ্মশানকালী

কালীর "শ্মশানকালী" রূপটির পূজা সাধারণত শ্মশানঘাটে হয়ে থাকে। এই দেবীকে শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনে করা হয়। তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ রচিত বৃহৎ তন্ত্রসার অনুসারে এই দেবীর ধ্যানসম্মত মূর্তিটি নিম্নরূপ:

শ্মশানকালী দেবীর গায়ের রং কাজলের মতো কালো। তিনি সর্বদা বাস করেন। তাঁর চোখদুটি রক্তপিঙ্গল বর্ণের। চুলগুলি আলুলায়িত, দেহটি শুকনো ও ভয়ংকর, বাঁ-হাতে মদ ও মাংসে ভরা পানপাত্র, ডান হাতে সদ্য কাটা মানুষের মাথা। দেবী হাস্যমুখে আমমাংস খাচ্ছেন। তাঁর গায়ে নানারকম অলংকার থাকলেও, তিনি উলঙ্গ এবং মদ্যপান করে উন্মত্ত হয়ে উঠেছেন।

শ্মশানকালীর আরেকটি রূপে তাঁর বাঁ-পাটি শিবের বুকে স্থাপিত এবং ডান হাতে ধরা খড়্গ। এই রূপটিও ভয়ংকর রূপ। তন্ত্রসাধকেরা মনে করেন, শ্মশানে শ্মশানকালীর পূজা করলে শীঘ্র সিদ্ধ হওয়া যায়। রামকৃষ্ণ পরমহংসের স্ত্রী সারদা দেবী দক্ষিণেশ্বরে শ্মশানকালীর পূজা করেছিলেন।

কাপালিকরা শবসাধনার সময় কালীর শ্মশানকালী রূপটির ধ্যান করতেন। সেকালের ডাকাতেরা ডাকাতি করতে যাবার আগে শ্মশানঘাটে নরবলি দিয়ে শ্মশানকালীর পূজা করতেন। পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রাচীন শ্মশানঘাটে এখনও শ্মশানকালীর পূজা হয়। তবে গৃহস্থবাড়িতে বা পাড়ায় সর্বজনীনভাবে শ্মশানকালীর পূজা হয় না। রামকৃষ্ণ পরমহংস বলেছিলেন, শ্মশানকালীর ছবিও গৃহস্থের বাড়িতে রাখা উচিত নয়।

শ্রীকালী গুণ ও কর্ম অনুসারে শ্রীকালী কালীর আরেক রূপ। অনেকের মতে এই রূপে তিনি দারুক নামক অসুর নাশ করেন। ইনি মহাদেবের শরীরে প্রবেশ করে তাঁর কণ্ঠের বিষে কৃষ্ণবর্ণা হয়েছেন। শিবের ন্যায় ইনিও ত্রিশূলধারিনী ও সর্পযুক্তা।

কালীপূজা

গৃহে বা মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত কালীপ্রতিমার নিত্যপূজা হয়। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ তিথিতেও কালীপূজার বিধান আছে। আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথিতে দীপান্বিতা কালীপূজা, মাঘ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে রটন্তী কালীপূজা এবং জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীতে ফলহারিনী কালীপূজা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও শনি ও মঙ্গলবারে, অন্যান্য অমাবস্যায় বা বিশেষ কোনো কামনাপূরণের উদ্দেশ্যেও কালীর পূজা করা হয়। দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়। এই উৎসব সাড়ম্বরে আলোকসজ্জা সহকারে পালিত হয়। তবে এই পূজা প্রাচীন নয়। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কাশীনাথ রচিত শ্যামাসপর্যাবিধি গ্রন্থে এই পূজার সর্বপ্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় অষ্টাদশ শতকে তাঁর সকল প্রজাকে শাস্তির ভীতিপ্রদর্শন করে কালীপূজা করতে বাধ্য করেন। সেই থেকে নদিয়ায় কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কৃষ্ণচন্দ্রের পৌত্র ঈশানচন্দ্রও বহু অর্থব্যয় করে কালীপূজার আয়োজন করতেন।

টমাস কবার্নের মতে, ‘কালী’ শব্দটি ‘কৃষ্ণবর্ণ’ বোঝানোর জন্যও ব্যবহৃত হতে পারে।

ফলহারিনী কালী
গৃহ ধর্মকে সুন্দর করতে এই দেবীর আবির্ভাব, নামে ফলহারিনী হলেও অভিষ্ট সিদ্ধ দায়িনি,জানা যায় রামপ্রসাদ নিজ স্ত্রীকে এই দিন দেবীরুপে পুজা করে নারী জাতীর সম্মানের জন্য এর ফল উৎসর্গ করেন।এটিও বাৎসরিক একটি পুজা।

রটন্তিকালী
পুত্র সন্তান কামনায় বিশেষ ভাবে এই দেবীর পুজা করা হয়, এছাড়া ধন বৃদ্ধির জন্যও ইনি বছরের একটি বিশেষ অমাবস্যায় পুজিত হন।শাস্ত্রানুযায়ী মাঘ মাসের কৃষ্ণাচতুর্দশী তিথির নামই হলো রটন্তি, এইদিন সন্ধায় তার পুজা করতে হয়।

নিশাকালী
নিশাকালী নিয়ে মতভেদ আছেবলা হয়ে থাকে ইনি জেলেদের রক্ষাকারী, দুর্যোগময় রাতে জেলেরা সমুদ্রে গেলে তার পুজা করে যেতেন, অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তার চরন ছোয়া ফুল যে নৌকায় থাকতো সেই নৌকা কদাচিৎ ডুবতোই না। এছাড়া আধিভৌতিক ভীতি কাটানোর জন্যওএই দেবী প্রসিদ্ধ। আবার অন্যমতভেদও আছেকোন এক সময় এক গ্রামের কয়েকটি জেলে পুরুষ নৌকা নিয়ে বের হয়ে যাবার পর প্রচণ্ড ঝড় শুরু হয়।সেই সময় সকল জেলে পত্নী তাদের স্বামীর জন্য দেবী মন্দিরে উপস্থিত হয়ে প্রার্থনা করতে থাকে, সেই সময় একজন বৃদ্ধা এসে তাদের নিশাকালীর মাহাত্ম্য কথা বলে তাদের বলেন, যে কুলে স্বয়ং দেবী জন্ম নিয়েছিলেন, সেই কুলের রুক্ষাকর্ত্রী দেবী নিজেই, তাই তার রুপ নিশাকালীর ব্রত করো, তিনিই দুর্যোগময় রাতে তোমাদের পতিদের রক্ষা করবেন, সেই থেকে জেলেকুলে ধুমধামের সাথে দেবীর স্থান হলেও কালক্রমে নিশাকালীর পুজা প্রথা বিলীন হয়ে যায়, কিন্তু স্থানভেদে কিছু জায়গায় এখনো তার পুজা বিদ্যমান।


কাম্যকালী
আমাদের বিশেষ কামনায় বা বিশেষ প্রার্থনায় যে কালীপুজা আয়োজন করা হয়, তাকেই কাম্যকালী পুজা বলা হয়, পুজা বিধি দক্ষিনাকালীর মতই।সাধারনত অষ্টমী, চতুর্দ্দশী অমাবস্যা পুর্ণিমা ও সংক্রান্তিকে পর্বদিন বলে।পর্বসমুহের মধ্যে অমাবস্যাকে বলা হয় মহাপর্ব। বিশেষ কামনায় এই সকল তিথিতে যে পুজা করা হয় তাকেই কাম্যকালী পুজা বলা হয়।

আজ আমরা জেনে আজকের প্রধান বিষয়বস্তু মা কালি পুজোর কিছু মন্ত্র
অনুষ্ঠান সামগ্রী
মহাকালির চিত্র, পরনে শ্বেত বস্ত্র, ভোগ ও নৈবেদ্য, ধুপ ও দীপ, ফুল ফল। সাধনা কালে উপবাস থেকে সন্ধ্যাকালে হাল্কা ফল মুল ভোজন করবেন । পূর্ণ ব্রহ্মচর্য পালন করবেন । অনুষ্ঠানের আগে স্নান আবশ্যক তার পর স্বচ্ছ বস্ত্র ধারন করবে । আসনে কালি মূর্তি স্থাপন তার সামনে ধুপ দীপ জ্বালাবে আর নৈবেদ্য রাখবে । সর্ব প্রথম গুরু কে স্মরণ করে মা কালির ধ্যান করবে । ধ্যান করার সময় মন বশে রেখে এক দৃষ্টি কালির দিকে তাকিয়ে থাকবেন , কালি আরাধনার শক্তিলাভ , দুঃখ , শোক , রোগ , মারীভয় নিবারণ ,গ্রহ শান্তি , দারিদ্রতা নাশ , শত্রু ক্ষয় , সর্বপরি সিদ্ধি লাভ , মুক্তি লাভের জন্য কালী পুজা করা । শাস্ত্রে দেখা যায় কালী আরাধনা ব্যতিত মুক্তি অসম্ভব।

প্রণাম মন্ত্র

জয়ন্তী মঙ্গলা কালীভদ্রা কালী
কপালিনীদূগা শিবা সমাধ্যাতীসাহা
সুধা নমস্তুতে।

ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয়হেতবে , নিবেদয়ামি চাত্মানংত্বং গতিঃ পরমেশ্বরঃ ।

ওঁ কালি কালি মহাকালি কালিকে পাপহারিনি দেবী নারায়ণী নমস্তুতে ,মহিষাঘ্নি মহামায়ে চামুণ্ডে মুণ্ডমালিনী আয়ুরোগয় বিজয়ং দেহি দেবী নমস্তুতে । এষ পুস্পাঞ্জলিঃ শ্রীমদ্দদক্ষিণকালিকায়ৈ নমঃ ।

ধ্যান মন্ত্র
ওঁ শবারুঢ়াং মহাভীমাং ঘোরদংস্ট্রাং বরপ্রদাম্।

হাস্যযুক্তাং ত্রিনেত্রাঞ্চ কপালকর্ত্তৃকাকরাম্।।


মুক্তকেশীং লোলজিহ্বাং পিবন্তীং রুধিরং মুহু।

চতুর্ব্বাহু যুতাং দেবীং বরাভয়করাং স্মরেৎ।।

মায়ের গায়ত্রী মন্ত্র
ওঁ কালিকায়ৈ বিদ্মহে শশ্মানবাসিন্যৈ ধীমহি তন্নো ঘোরে প্রচোদয়াৎ ……… (১০ বার জপ করুন)

জপের মন্ত্র
ক্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হ্রীং হ্রীং দক্ষিণ কালিকে ক্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হুং স্বাহা

আচমন
ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ তদবিষ্ণুঃ পরমং পদং পশ্যন্তি সুরয়ঃ । দিবীব চক্ষুরাততম ।। ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ওঁ বিষ্ণু ।।

পুস্প শুদ্ধি
ওঁ পুস্পে পুস্পে মহাপুস্পে সুপুস্পে পুস্পে পুস্পসম্ভবে । পুস্পেচয়াবকীরনে ওঁ হুং ফট স্বাহা ।

পুজা মন্ত্র
এষ গন্ধ ওঁ গণেশায় নমঃ , এতৎ সচন্দন পুষ্পম ওঁ গণেশায় নমঃ , এষ ধুপ ওঁ গণেশায় নমঃ , এষ দীপ ওঁ গণেশায় নমঃ , এতন নৈবেদ্য ওঁ গণেশায় নমঃ । জপঃ ওঁ গণেশায় নমঃ

এষ গন্ধ ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ , এতৎ সচন্দনপুস্পম ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ , এষ ধুপ ওঁ শ্রীসূর্যা নমঃ ,এষ দীপ ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ , এতন নৈবেদ্যম ওঁ শ্রী সূর্যায় নমঃ ।

সূর্যের ধ্যান

ওঁ রক্তাম্বুজাসনমশেষগুনৈকসিন্ধুং , ভানুং সমস্তজগতামধিপং ভজামি । পদ্মদ্বয়াভয়রবান দধতং করাজৈর মানিক্যমৌলিমরুণাঙ্গরুচিং ত্রিনেত্রম ।

কালীকবচম্
——————————————————

ভৈরব উবাচ কালিকা যা মহাবিদ্যা কথিতা ভুবি দুর্ল্লভা।

তথাপি হৃদয়ে শল্যমস্তি দেবি কৃপাং কুরু।।

কবচন্ত মহাদেবী কথয়সানুকম্পা।

যদি নো কথ্যতে মাতব্বিমুঞ্চামি তদা তনুম।।

দেব্যুবাচ: শংকাপি জায়তে বৎস তব স্নেহাৎ প্রকাশিতম।

ন বক্তব্যং ন দ্রষ্টব্যমতি গুহ্যতমং মহৎ।।

কালিকা জগতাং মাতা শোকদুঃখাদি বিনাশিনী।


বিশেষত কলি যুগে, মহাপাতকহারিণী।।

কালী মে পুরুত: পাঠু পৃষ্ঠতশ্চ কপালিনী।

কুল্বা মে দক্ষিনে পাতু করণৌ চগ্রোপ্রভামতা।।

বদনং পাতু মে দীপ্তা নীলা চ চিবুকং সদা।

ঘনা গ্রীবাং সদা পাতু বলাকা বাহুযুগ্মকম।।

মাত্রা পাতু করদ্বন্দং বক্ষো মুদ্রা সদাবতু।

মিতা পাতু স্তনদ্বন্দং যোনিং মন্ডল দেবতা।

ব্রাম্মী মে জঠরং পাতু, নাভিং নারায়ণীং তথা।

ঊরু মাহেশ্মরী নিত্যং চামুন্ডা পাতু লিঙ্গকম।

কৌমারী চ কটিং পাতু তথৈব জানুযুগ্মকম।

অপরাজিতা পাদৌ মে বারাহী পাতু চাঙ্গুলীঃ।

সন্ধিস্থানং নারসিংহী পত্রস্থা দেবতাবতু ।।

রক্ষাহীনঞ্চ যৎ স্থানং বর্জ্জিতং কবচেন তু।

তৎ সর্ব্বং রক্ষ মে দেবী কালিকে ঘোর দক্ষিণে।।

ঊর্দ্ধং-মধ্যস্তথা দিক্ষু পাতু দেবী স্বয়ং বপুঃ।।

হিংস্রেভ্যঃ সর্ব্বদা পাতু সাধকঞ্চ জলাধিকাৎ।

দক্ষিণা কালিকে দেবী ব্যাপকত্তে সদাবতু।

ইদং কবচমজ্ঞাতা যো জপেদ্দেবদক্ষিনাম

ন পুজাফলমাপ্নোতি বিঘ্নস্তস্য পদে পদে।

কবচেনাবৃতো নিত্যং যত্র তত্রৈব গচ্ছতি

তত্র তত্রভয়ং তস্য ন ক্ষোভং বিদ্যতে ক্কচিৎ।

রটন্তী কালো র ধ‍্যান:(এই ধ‍্যান টি স্নানান্তে এক বার করবেন)
ওঁ খড়্গং চক্রগদেষুচাপপরিঘান শূলং ভুসূণ্ডিং শিরঃ| শঙ্খং সন্দধতীং করৈস্ত্রিনয়নাং সর্বাঙ্গভূষাবৃতাম্ || নীলাশ্মদ্যুতিমাস্যপাদদশকাং সেবে মহাকালিকাম্ | যামস্তৌচ্ছয়িতে হরৌ কমলজো হন্তুং মধুং কৈটভম্ ||'

৪) এর পর আবার জপ, নিচে জপ মন্ত্র দেয়া —– জপ করুন

*** ক্রীং কালিকায়ৈ নমো

এর পর নিচের মন্ত্রে হাতে একটু জল নিয়ে জপ বিসর্জন করুন
ওঁ গুহ্যাতিগুহ্য গোপ্তৃীং ত্বং গৃহানস্মতং কৃতং জপো, সিদ্ধির্ভবতু মে দেবি তৎ প্রসাদৎ সুরেশ্বরী ৷৷

৫) এবার বন্দনা করুন
ওঁ মহামায়ে জগন্মাত কালিকে ঘোর দক্ষিণে ৷
গৃহাণ্ বন্দনে দেবী নমস্তে শংকর প্রিয়ে ৷৷
ওঁ প্রচন্ডে পুত্রদে নিত্যং সুপ্রীতে সুর নায়িকে ৷
কুলদ্যোতকরে চোগ্রে জয়ং দেহী নমোহস্তুতে ৷৷

এর পর অপরাধ ক্ষমা প্রার্থনা করে নিচের মন্ত্র পরে কাজ শেষ করে আপনার সমস্যা বা মনোবাসনা মায়ের চরণে নিবেদন করুন ….

ওঁ যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং মাত্রাহীনঞ্চ য়দ্ ভবেৎ ৷
পুরনং ভবতু যৎ সর্ব, তৎ প্রসাদৎ সুরেশ্বরী ৷৷

শেষ কথা
আমরা আজ জানলাম মা কালির কিছু মন্ত্র। তবে একটা কথা বলি তোমাদের সবাইকে মা কালির পুজো করতে গেলে অবশ্যই পুরোহিত এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে ও ব্রাহ্মণ পুরোহিত বা ঠাকুর মশাই দিয়েই পুজো করানো উচিত। তার কারণ হল মানুষ মাত্রেই ভুল হয় আর কথায় আছে যে মা কালী খুব রাগী একজন ঠাকুর আর কোনো ভুল ভাল মন্ত্র পাঠ না করাই ভালো। সেই জন্যে পুজোর জন্য ঠাকুর মশাই বা কোনো ব্রাহ্মণ পুরোহিত যে মা কালির পুজো করে থাকেন তাকে বা তাদের দিয়েই মা কালী পুজো করানো উচিত। পোস্টটি শেয়ার করবেন সবার উদ্দ্যেশে। ভালো থাকবেন ভালো রাখবেন। জয় মা ,কালী মায়ের জয়। মা সবার মঙ্গোল করুক এই প্রার্থনা করি। ধন্যবাদ।

প্রিয় বন্ধুরা আমাদের প্রতিদিনের পোস্ট পড়তে যাদের ভাল লাগছে তারা প্লিজ আমাদের ফেসবুক পেজ ASTRO PLAMIST NEUMEROLOGY CENTER ,type @astropalmist1 এবং আমাদের website :www.apnc.co.inলাইক করতে এবং অন্যদেরও শেয়ার করতে ভুলবেন না যেন যাতে তারাও পড়ার সুযোগ পান এবং আপনার মত উপকৃত হন। আমরা আরও ভালো কিছু লেখা পোস্ট করার অনুপ্রেরণা পাব। কিন্তু দয়া করে কেউ কপি করে এডিট করে নিজের page/group/website /timeline পোস্ট করে নিজেকে ছোট করবেন না।

ACHARYA KUSH MUKHERJEE
RAMPURHAT CHAKLAMATH BIRBHUM (W.B)
PIN NO 731224
GOLD MEDALIST
WHATSAPP NO 9233172388
CONTACT NO 7001608953
ONLINE PORISEVA DEWA HOI rs 1000/=
MY PAGE NAME IS ASTRO-PALMIST-NEUMEROLOGY CENTER
PLEASE LIKE&SARE
Contact with me :www.apnc.co.in
https://m.facebook.com/Astro-Palmist-Neumerology-Center-1569956439973629/?ref=bookmarks



Blog Url:
https://apnc.co.in/blog.php?blog=20201114180816